শুল্ক ছাড়েও কমেনি আলু-পেঁয়াজের দাম, উল্টো বেড়েছে
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও কোনোভাবেই কমছে না আলু ও পেঁয়াজের দাম। উল্টো গত সপ্তাহের তুলনায় আরও বেড়েছে।
গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর খুচরা বাজারে আলু কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে থেকেই বাজার চড়া পেঁয়াজের দামও কেজিপ্রতি আরও ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
অথচ দাম নিয়ন্ত্রণে গত বুধবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে এনবিআর পেঁয়াজ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। শুল্ক ছাড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ দেশে আসছে। এর পরও দাম না কমে উল্টো বাড়ছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমাগার গেটে আলুর দর বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আর বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটে দেশি ও আমদানি দুই ধরনের পেঁয়াজের দামই বাড়তি।
রাজধানীর মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দর কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। সরবরাহ সংকটে বাজারে দেশি রসুনের দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায় উঠেছে। আমদানির রসুন প্রতি কেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরায় প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায় এবং সোনালি কেজিতে মানভেদে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা হাঁকছেন।
তবে শীতের আগাম সবজি বাজারে চলে আসায় সরবরাহ বেড়ে দাম কিছুটা কমেছে। কাঁচামরিচের দাম কমে কেজিতে মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
সব ধরনের নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের মধ্যেই নতুন করে পেঁয়াজ, রসুন ও আলুর বাজারের অস্থিরতায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ক্রেতারা বলছেন, ‘বাজারে আলু ও পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখছি না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে কোনো ধরনের তদারকি না থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা আলু ও পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলছেন।’
এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩টি স্থানে উৎপাদক থেকে ডিলারের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে ডিম সরবরাহ করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দুই সপ্তাহের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্যে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা হাসান আলী ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত ১৫ দিনে আলুর দাম বস্তায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এ কারণে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা বিক্রি করলেও আমাদের লাভ হচ্ছে না।’
মিরপুর নান্নু মার্কেট কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা করিম মোল্লা বলেন, ‘আলু ও পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। শুনছি, সরকার শুল্ক ছাড় দিচ্ছে; কিন্তু এর কোনো প্রভাবই বাজারে পড়ছে না। উল্টো দেখছি ১০-২০ টাকা করে বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম।’
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের মতো এবারও আলুর বাজারে অস্থিরতার কারণ হিমাগার মালিকদের কারসাজি। তারা মৌসুমের শুরুতে কম দামে আলু কিনে মজুদ করেন এবং পরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেন। একই প্রক্রিয়া চলছে সারা দেশে। আরও বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে যাওয়ার কারণ এই মজুদদারি ও কৃত্রিম সংকট।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে