Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় বাড়ছে

Mamun–Or–Rashid

মামুন–অর–রশিদ

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় বেড়েছে। গত পাঁচ বছরের বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক লাফে গত অর্থবছর বিদ্যুতের আমদানি ব্যয় প্রতি কিলোওয়াট/আওয়ার বা ইউনিটে বেড়েছে ২ টাকা ৬ পয়সা। কেন এই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেল, এমন প্রশ্নে আদানীর কয়লা বিদ্যুতের আমদানি শুরু হওয়াকেই দায়ী করছেন সবাই। ঝাড়খন্ডে আদানি গ্রুপের এই কেন্দ্রটি কেবলমাত্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। দেশে যেসব আমদানি করা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, তার চেয়ে কেন্দ্রটির বিদ্যুতের দাম খানিকটা বেশি বলে সমালোচনা রয়েছে।

দেখা গেছে ভারতে কেন্দ্র নির্মাণ করে আরেকটি সিঙ্গাপুরের কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে চড়া দরে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। সেম্বকর্প নামের ওই কোম্পানিটি সিঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে। সেম্বকর্পের কেন্দ্রটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবির কাছে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে ৯ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। অন্যদিকে আদানি বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে ১৪ টাকা ০২ পয়সায়।

এই দুই কেন্দ্রের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করায় ভারতের বিদ্যুতের দামের ওপর একবারে বেশি প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে বিদ্যুতের দম কম হওয়াতে এখন ভারতের কোনো কোনো কোম্পানির লক্ষ্যই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করা। শুধু জীবাশ্ম জ্বালানি নয় নবায়নযোগ্য জ্বালনির বিদ্যুৎও বাংলাদেশের কাছে বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। ভারতের প্রভাবশালী এসব কোম্পানির উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেখা করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত যেখানে সাড়ে তিন রুপিতে প্রতি ইউনিট নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনছে।

সেখানে বাংলাদেশের কাছে তারা ৯ টাকা করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যয়সহ ৫ টাকা ৪৬ পয়সায় কিনেছে। ওই বছর বাংলাদেশ ভারত থেকে ৩৭০২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৭ টাকার বিনিময়ে ৬৭৫ কোটি ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৬ ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানি করে। এর পরের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ১ পয়সায় বিদ্যুৎ আমদানি করে। ওই বছর ভারত থেকে ৬৬৮ কোটি ৯২ লাখ ৭ হাজার ৫৫৫ ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানি করে। এ জন্য মোট ৪০১৭ কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭৯ টাকার প্রয়োজন পড়ে।

দেখা যায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে খরচ পড়ে মোট ৪৭১২ কোটি ৯১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮০ টাকা। ওই বছর ভারত থেকে মোট আমদানি করা হয় ৮১২ কোটি ৮৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৩ ইউনিট বিদ্যুৎ। ওই বছর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ আমদানিতে খরচ পড়ে ৫ দশমিক ৮০ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সেখানে বিদ্যুতের আমদানি খরচ বেড়ে হয় ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা ১১ পয়সা। ওই বছর ভারত থেকে মোট ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকার বিনিময়ে ৭৬৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৫ ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানি করে।

গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই দাম এক লাফে বেড়ে ইউনিটপ্রতি দাঁড়ায় ৮ টাকা ৭৭ পয়সা। গত বছর ভারত থেকে ১০৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৬৮ হাজার ২০৬ ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রয় করে। এতে মোট ব্যয় হয় ৯২২৩ কোটি ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৬ টাকা। ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ ভ্যাপান নিগাম লিমিটেডের (এনভিভিএন) কাছ থেকে গত বছর ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ৪ টাকা ২২ পয়সায় কেনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর প্রথম ভারত সফরে গেলে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আন্তরিকতায় ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দামে বাংলাদেশকে দিতে সম্মত হয়। তখন ভেড়ামারায় একটি ব্যাক টু ব্যাক সাব-স্টেশন নির্মাণ করে। বাংলাদেশের তরফ থেকে তখন ভারতের খোলাবাজার থেকে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার একটি প্রস্তাব দেয়া হয়। পরে এই সাব-স্টেশনের ক্ষমতা বাড়িয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট করা হয়। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা থেকে আরও ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এই বিদ্যুৎও ত্রিপুরার প্রাদেশিক সরকারের কাছ থেকে এনভিভিএন বাংলাদেশকে ক্রয় করে দেয়।

ভারতের খোলাবাজারে প্রতিদিন বিদ্যুতের দাম ওঠানামা করে। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের মতো ভারতের বাজারে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ হয়। ভারতের খোলা বাজার থেকে এনভিভিএন এবং পিটিসি (ইন্ডিয়া) যে বিদ্যুৎ পিডিবিকে ঠিকাদার হিসেবে কিনে দেয়, এরমধ্যে ত্রিপুরার বিদ্যুতের দাম পড়েছে গত বছর ৮ টাকা ৪৫ পয়সা প্রতি ইউনিট। এ ছাড়া খোলাবাজারের ৩০০ মেগাওয়াটের দাম পড়েছে ৭ টাকা ১৫ পয়সা। পিটিসির ২০০ মেগাওয়াটের দাম পড়েছে ৯ টাকা ৫ পয়সা করে। সেখানে সেম্বকর্প বিক্রি করছে ৯ টাকা ৯৫ পয়সায়। অন্যদিকে আদানি তার চেয়ে বেশি ১৪ টাকা ০২ পয়সা। আদানির চেয়ে ভারতের খোলা বাজার থেকে বিদ্যুৎ কিনে আনলেও পিডিবির লাভ হতো বলেই এখন দেখা যাচ্ছে।

সরকার বিদ্যুৎ জ্বালানির উন্নয়নে যে সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান করেছে সেখানে বিপুল পরিমাণ আমদানির কথা উল্লেখ রয়েছে। নিজস্ব স্বক্ষমতার বদলে আমদানি নির্ভরতা বাড়াতে থাকলে ভবিষ্যৎ পরিণতি কি হবে সেটি বলা মুশকিল। প্রতিবেশীদের নীতির ওপর আমাদের নির্ভর করতে হবে। দেশগুলো বিদ্যুতের ওপর যে কোনো ধরনের করারোপ করে আমাদের তা পরিশোধ করতে হবে। ফলে সরকারে উচিত ভারতের বিদ্যুতের আমদানি খরচ বদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সব সিদ্ধান্ত নেয়া।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ