ছয় দফা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাণী
আজ ৭ জুন, ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন।
বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন, ৭ জুন ‘ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস’। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে ৬ দফা একটি অনন্য মাইলফলক। ৬ দফার মাধ্যমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন।
তিনি এই মহান দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা বাঙালির সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। রচিত হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে সর্বদলীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। শাসনতান্ত্রিক কাঠামো, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা, মুদ্রানীতি, রাজস্ব ও করনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাহিনী গঠনসহ এই ৬ দফার মধ্যেই তিনি পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার তুলে ধরেন, যার মধ্যে নিহিত ছিল বাঙালির স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা।
মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণার পর শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় এবং তাঁকে বারবার গ্রেপ্তার করে। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু ৬ দফার দাবি থেকে পিছপা হননি। ৬ দফার সমর্থনে জনমত সৃষ্টির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু বাঙালির রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ করেন। জেল-জুলুম, নির্যাতন কোনো কিছুই তাঁকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের আন্দোলন বেগবান হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তা সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। শাসকগোষ্ঠী ৬ দফার আন্দোলন স্তিমিত করতে গ্রেফতার, নির্যাতনসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফা দাবির সমর্থনে আওয়ামী লীগের আহ্বানে প্রদেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট চলাকালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মদদে পুলিশের গুলিতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১১ জন শাহাদত বরণ করেন। আহত ও গ্রেফতার হন অনেকে। আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দেশ।
রাষ্ট্র প্রধান জানান, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ তথা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে ৭ জুনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, ঐতিহাসিক ৭ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন।
তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা দাবির ঐতিহাসিক আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল পালনের সময় নিরস্ত্র মানুষের ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলি চালিয়েছিল। সেদিন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মানু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শাহাদাত বরণ করেন।
ঐতিহাসিক ৭ জুনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর- এ কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতার সুফল দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিগত ১৫ বছরে সরকার দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে-এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা এবং দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ ও আধুনিক-স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
এ ছাড়াও ‘ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে