Views Bangladesh Logo

বাল্যবিবাহ রোধ করুন

য়েকদিন আগে স্থানীয় এক মার্কেটে গিয়ে কৌতুককর একটা ঘটনার মুখোমুখি হলাম। স্বামী-স্ত্রী এসেছেন কেনাকাটা করতে, স্বামীর বয়স হবে ১৫-১৬, স্ত্রীর ১২-১৩। হাতে হাত ধরে ঘুরে ঘুরে তারা বেশ হাসিখুশি ভঙিতেই কেনাকাটা করছিলেন, হঠাৎই কী নিয়ে যেন ঝগড়া লেগে গেল। ঝগড়া লেগে স্বামী স্ত্রীকে রেখেই দ্রুত পা চালিয়ে সামনে এগিয়ে গেল, স্ত্রীটির মুখ কাঁদো কাঁদো, যেন স্বামী সত্যিই তাকে ফেলে বাড়ি চলে যাচ্ছে, একটু এগিয়েই অবশ্য স্বামী ভদ্রলোক পেছন ঘুরে স্ত্রীকে ধমক লাগালেন, আসস না! দোকানিরা হাসছিলেন। এক দোকানি বলেই বসলেন, অল্প বয়সে বিয়া করলে এমনই হয়!

ঘটনাটা কৌতুককর হলেও দুঃখজনক বটেই। তখনই মনে পড়ল, বাংলাদেশে এখনো কত কিশোর-কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে! সংবাদপত্র ঘেটে সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে যা জানা যাচ্ছে তা আতঙ্কজনক। দেশে বাল্যবিবাহের হার ৫১.৪০ শতাংশ। ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের হার ৫১ দশমিক ৪০। আর ১৫ বছরের নিচে এই হার ১৫ দশমিক ৫০। করোনার পর দেখা গেছে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহে বাংলাদেশ এখনো শীর্ষে। বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর দুই শতাংশ হারে বাল্যবিবাহ কমছে। তবে এই গতিতে বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে ২১৫ বছর লেগে যাবে।

উপরোক্ত কারণগুলো যদি আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট না মনে হয় তাহলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ অনুযায়ী এটা রাখা দরকার যে, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭০ জন কিশোরী মা হচ্ছেন। আর কিশোরী বয়সে মা হলে মা ও সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৮ বছর বয়সের আগে একটি মেয়ের শরীর বিয়ে ও গর্ভধারণের জন্য তৈরি হয় না। এই বয়সে গর্ভে সন্তান ধারণের মানে হলো ‘শিশুর গর্ভে শিশু’। ডব্লিউএইচওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, কিশোরী মাতৃত্ব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ৬০ শতাংশ কিশোরী মা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। তাদের পুষ্টির অভাব থাকে। অপুষ্ট মায়ের বাচ্চাও অপুষ্টির চক্রে ভোগে। কিশোরী অবস্থায় গর্ভবতী হলে গর্ভপাত হওয়ারও যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে।

আইনে ন্যূনতম বিয়ের বয়স মেয়েদের জন্য ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছর অপরিবর্তিত থাকলেও ২০১৭ সালে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান নিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সংশোধন করা হয়েছে। তবে জনসচেতনতার অভাব এবং মেয়েদের জন্য যথার্থ বিকল্প শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বা উপার্জনের সুযোগ না থাকার কারণে এ আইন এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রভাব ফেলতে পারেনি। গত তিন-চার দশক ধরে বিভিন্ন উদ্যোগ, যেমন কিশোর-কিশোরী উন্নয়ন ক্লাব, দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং আর্থিক সুবিধা বাস্তবায়িত হওয়া সত্ত্বেও বাল্যবিবাহ রোধ করা যায়নি। জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় ২০২১ সালের বাল্যবিবাহ এক-তৃতীয়াংশ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার; কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই।

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বন্ধের কর্মসূচিতে নতুন চিন্তাভাবনা এবং উদ্ভাবনী কৌশলের প্রয়োজন। এর জন্য সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙির পরিবর্তন জরুরি। বাল্যবিবাহ রোধে সমাজের প্রতিটি মানুষকেই সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের সঙ্গে বাল্যবিবাহ রোধে জনসচেতনতামূলক প্রচারণাও জরুরি। সরকারকে আরও কঠোর হস্তে বাল্যবিবাহ রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ