Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

অপরিণত নবজাতকের মৃত্যু রোধ করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ১৪১, এখন তা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। অর্থাৎ, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ৮৫ শতাংশ; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, অপরিণত নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা যায়, দেশে বছরে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬০০ আকালিক নবজাতকের জন্ম হয়। ১০০ নবজাতকের মধ্যে ১৬ দশমিক ২টি শিশু আকালিক। বিশ্বে আকালিক শিশু জন্মের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে যথাক্রমে মালাবি, পাকিস্তান ও ফিলিস্তিন। অন্যদিকে ২৩ শতাংশ নবজাতক প্রয়োজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মায়। এই হার বিশ্বে দ্বিতীয়।

অকালে ও কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে বছরে অপরিণত ও কম ওজন নিয়ে জন্মানো ২৪ হাজার ৯০০-র বেশি নবজাতক মারা যায়। এর অর্থ প্রতি ঘণ্টায় এ ধরনের তিনটি নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। গবেষকরা দেখেছেন, এ ধরনের নবজাতক মেয়ের চেয়ে ছেলে বেশি। ছেলেদের মৃত্যুহারও বেশি।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন অপরিণত নবজাতকের জন্ম হয় আর তাদের অনেকের মৃত্যু হয়? তাছাড়া কেনই বা দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে শিশু আকালিক হওয়ার কারণ জানা যায় না। তবে এসব শিশুকে এক সপ্তাহ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হলে পরবর্তী সময়ে ভালো ফল দেখা যায়। গবেষণা বলছে, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ আকালিক ও অপরিণত নবজাতক জন্মের পেছনে কাজ করে। জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নবজাতকের ঝুঁকি কমে।

প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসব-পরবর্তী পর্যায়ে সেবা বা করণীয় সম্পর্কে অনেকেরই জানা আছে; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জানা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে এসব সম্পর্কে সচেতনতা কম। এখনো বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না, অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীর মা হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। আর সর্বোপরি প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সেবা থেকে অনেক মা-ই বঞ্চিত। ফলে আকালিক নবজাতকের জন্মের কারণে অনেক শিশুই যেমন মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে, অনেক মাও মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে।

এটা শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দুঃখজনক নয়, একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। একটু সচেতন হলেই আমরা এই বিরাট ক্ষতি এড়াতে পারি। এর জন্য যেমন দরকার প্রতিটি পরিবারের সচেতনতা, তেমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যথাযথ উদ্যোগ। এর জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজ করতে হবে। প্রতিটি মাকেই চিকিৎসাসেবার আওতায় আনতে হবে। আর সামাজিক সচেতনতারও কেনো বিকল্প নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ