Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যেখানে বাসস্ট্যান্ড, ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও চলে চাঁদাবাজি। সে যে সরকারই আসুক, চাঁদাবাজদের হাত থেকে মুক্তি নেই। আগে চাঁদাবাজি চলেছে রাজনৈতিক নেতাদের নামে, এখন চাঁদাবাজি চলছে সমন্বয়কদের নামে।

গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, বালুমহাল দখল, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলেও থেমে নেই চক্রটি। সীমান্তবর্তী উপজেলার বালু ও পাথর ব্যবসায়ী এবং চোরাকারবারিদের টার্গেট করে তারা এসব অপকর্ম করছে। রাস্তাঘাটেও ছিনতাই এবং চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র ও সমন্বয়কদের হাতে অনেক ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকটাই বিকল হয়ে পড়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, এখনো অনেক থানায় পুলিশ ঠিকমতো কার্যক্রম শুরু করেনি। এ সুযোগে নানা জায়গায় চাঁদাবাজিও বাড়ছে। কিন্তু সমন্বয়কদের নামে এরকম চাঁদাবাজি চলতে থাকলে তা ছাত্রদের নামেই বদনাম সৃষ্টি করবে।

সমন্বয়কদের ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। যারা চাঁদাবাজি করছে, তারা যদি ধরা না পড়ে, তাদের যদি বিচারের আওতায় না আনা হয়, তাহলে যে-ই চাঁদাবাজি করুক, তার দোষ সমন্বয়কদের ওপরেই পড়বে। সাধারণ মানুষ আর এত যাচাই-বাচাই করে দেখবে না, কে প্রকৃত অপরাধী।

সিলেটের সমন্বয়ক আসাদ উল্লাহ আল গালিব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, উপজেলায় তাদের কোনো কমিটি নেই, যারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

কথিত সমন্বয়কদের উৎপাত বেশি সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাটে। উপজেলার লেঙ্গুড়া গ্রামের আজমল হোসেন প্রথমে গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজ, পরে উপজেলা সমন্বয়ক দাবি করে নানা অপকর্ম করছেন। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। ইউএনওকে চাপ দিয়ে গোয়াইন নদী থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর বালুবাহী ১১টি নৌকা জব্দ করেন, পরে দেড় লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। লেঙ্গুড়া বালুমহালের ইজারাদার সুবাস দাসের অভিযোগ, সরকারের রাজস্ব দিয়ে তিনি বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। বালুবাহী নৌকা থেকে এক দল যুবক সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে টাকা নিচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ইউএনওকে চাপ দেয়ার মতো শক্তি তারা কোথায় পান? কী তাদের প্রকৃত পরিচয়? ইউএনও কেন স্থানীয় থানায় খবর দিলেন না? এতবড় দুষ্কর্ম করছে, তারা নিশ্চয়ই একজন-দুজন নন, দুষ্কৃতকারীরা নিশ্চয়ই সংঘবদ্ধ বড় একটি দল। তাদের বিরুদ্ধে এখনো কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? তাদের নাম-পরিচয় বের করা তো কঠিন কিছু না।

জানা গেছে, এক বালু ব্যবসায়ীর কাছে সমন্বয়ক পরিচয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। একইভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর নৌকাগুলো ছাড়িয়ে আনার পথে আজমল হোসেন, রুহুল আমিন, খসরুল আমিনসহ কয়েকজন আবারও চাঁদা দাবি করেন। পরদিন থানায় অভিযোগ দেন তিনি। কলেজের সমন্বয়ক দাবির প্রতিবাদে আজমল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার আজমলের বিরুদ্ধে উপজেলায় গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি হয়।

থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও গণস্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি কেন করতে হলো? চাঁদাবাজির অভিযোগই যথেষ্ট ছিল। চাঁদাবাজ, সে যে-ই হোক, যে দলেরই হোক তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। চাঁদাবাজি মানে ডাকাতি। কোনো পরিচয়েই তাদের বরদাশত করা হবে না। আমরা চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও কঠোর হবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দুজন সমন্বয়কারী আছেন।

সমন্বয়কারী পরিচয় দিয়ে কোনো অপরাধ করলে তারা সে ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হবেন। কারণ, সমন্বয়কারী পরিচয় দিয়ে কোনো অপরাধ করলে তা তাদের ঘাড়েও পড়বে। তাই যে কোনো মূল্যে সমন্বয়কারী পরিচয়ে চাঁদাবাজি রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযুক্তদের আইনের মুখোমুখি করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ