বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার রোধ করুন
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট চলছে। আর তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। অথচ এই সংকটের মধ্যেই দেশে বাণিজ্যের আড়ালে কিছু কিছু বড় ব্যবসায়ীর বিদেশে টাকা পাচার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণের রেকর্ড তো আছেই। সেইসঙ্গে বেড়েছে কর ফাঁকি, মূল্যস্ফীতি ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার। আর এই খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, তার দুটি নেপথ্য কারণ হলো দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার হওয়া। অন্যদিকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দার দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। যার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বারবার সতর্ক করে যাচ্ছেন।
মানুষের আস্থার বড় জায়গা ব্যাংক খাত। এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। তবে মাঝে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, সে তুলনায় এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ডলারের বাজার পুরোপুরি ঠিক না হলেও আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। আমানত তুলতে এসে না পাওয়ার ঘটনা নেই বরং উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়েও আমানত বেড়েছে। ঋণে প্রবৃদ্ধি আছে।
বাণিজ্যনির্ভর মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি আগে ভালোভাবে দেখা হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির পর এখন বোঝা যাচ্ছে, বড় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যের আড়ালে অনেক টাকা পাচার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে এখন ব্যাংকাররা এসব ভালোভাবে দেখছেন।
মাঝে কিছু ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন এবং ডলার বিক্রির ফলে তারল্যের ওপরও চাপ তৈরি হয়েছিল। যে কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করেছিল। কোনো ব্যাংকে টাকা তুলতে এসে পাননি কিংবা ঋণ চেয়ে না পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। যে কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম আছে।
ইতিমধ্যে দেশে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের আয় কমে গেছে; কিন্তু মানুষ কোনোভাবেই তাদের ব্যয় কমাতে পারছে না। ফলে উৎপাদিত পণ্য সেভাবে বিক্রিও হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীদের নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে। আয় ও ব্যয়ের হিসাবে দেখা দিয়েছে অনেক ব্যবধান।
অথচ দেশের বিশেষ একশ্রেণির মানুষ কর ফাঁকি দেয়ার জন্য বিদেশ থেকে দর কম দেখিয়ে পণ্য আমদানি করেন। এর মাধ্যমে তারা একদিকে কর ফাঁকি দিচ্ছেন, অন্যদিকে অর্থ পাচার করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তা এখনো কার্যকর হয়নি।
মূলত ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের সংকট কোনো ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক একা সমাধান করতে পারে না। এখানে আইনি সংস্কারের দরকার আছে। তাই আদালত ও বিচারক সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর্থিক বিষয়ে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ ছাড়া ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোর নীতি প্রয়োগ করতে হবে।
অর্থনীতির প্রতিটি উদ্দীপক একটি অপরটির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যে কারণে বাণিজ্যের আড়ালে বড় ব্যবসায়ীদের একটা অংশ বিদেশে টাকা পাচার করছে, সে কারণে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। আবার বৈধপথে প্রবাসী আয়ও কমছে। সেইসঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। যার জন্য রিজার্ভে টান পড়েছে। তাই খেলাপি ঋণ, দুর্নীতি ও হুন্ডিব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশে চরম অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা আছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে