নাগালের বাইরে যাচ্ছে খাদ্যপণ্যের দাম, চরম অস্বস্তি
বেসরকারি চাকরিজীবী রাজু আহমেদ সাধারণত মাসের শুরুর দিকে পুরো মাসের বাজার করেন। চাল, তেল, মাছ-মাংস কেনেন যাত্রাবাড়ী আড়ত থেকে। এতে কিছুটা সাশ্রয় হয়। তবে কাঁচা তরিতরকারির জন্য তাকে বাসার পাশের বাজারে যেতে হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। তবে শীতের সবজির দাম শুনে পড়েন চরম অস্বস্তিতে।
বাজার থেকে ফেরার পথে রাজু আহমেদ ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, মহল্লার বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। গাজর ১৮০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা আর শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এ ছাড়া ছোট সাইজের ফুলকপি ৫০-৬০ টাকা আর পাতা কপি ৪০ টাকা। তাছাড়া সব রকমের সবজির দামই চড়া। আমি স্বল্প আয়ের মানুষ। আমার পক্ষে এত দামের সবজি কিনে খাওয়া সম্ভব না।
প্রায় একই কথা বলেন মারজান খানম নামের এক গৃহিণী। তার ভাষায়, বাজারে সব ধরনের সবজির দামই নাগালের বাইরে। এখনো আলু ৭০ টাকা কেজি কিনে খেতে হবে তা কখনো ভাবতেই পারিনি। মাছ-মাংসের দিকে হাত বাড়ানোর সাহসও হয় না। শুধু রাজু আহমেদ বা মারজান খানম নন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে এমন অস্বস্তি দেখা যায় অধিকাংশ ক্রেতাদের মধ্যে।
শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নিউমার্কেট, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজারে চড়া দামে নিত্যপণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে বাজারে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে আলু। অতিপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি ওইদিন বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। গত কয়েকমাস ধরে আলুর দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকায় ওঠানামা করলেও আজ একলাফে উঠেছে ৭০ টাকায়।
সবজির মধ্যে ঢ্যাঁড়শ, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা কিনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। বেগুন, করলা ও কাঁকরোল ৮০-১০০ টাকা ও পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। লাউ সাইজ ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আলু ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তার আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। হঠাৎ করেই এ সপ্তাহে দাম বেড়েছে।
হঠাৎ আলুর দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, আলুর মৌসুম এখন শেষের দিকে। প্রতি বছর এ সময় দাম বাড়ে। তবে এ বছর শুরু থেকে আলু চড়া দামে বিক্রি হয়ে আসছে। সামনে আরও বাড়তে পারে।
পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলু ৬২-৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকাররা। তারা জানান, এক সপ্তাহ আগেও ৫৮-৬০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা গেছে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম কমবে বলে মনে হয় না। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় দুই দফায় আলুর বীজ নষ্ট হওয়ায় সারা বছর আলুর দাম অস্থিতিশীল ছিল। নতুন আলু এলেও দাম কতটা কমবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।
টমেটো, গাজর, শিম, ফুলকপিসহ অন্যান্য শীতের সবজির দাম সহসাই কমবে না বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বিক্রেতা। তারা বলছেন, শীতের শুরুতে এসব সবজির চাহিদা বেশি থাকে; কিন্তু বন্যাসহ অতিবৃষ্টির কারণে অনেক স্থানে ক্ষেতেই সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দাম বেড়েছে।
এদিকে বরাবরের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়।
বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। শিং মাছ সাইজ ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, সরপুঁটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, রুপচাঁদা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, গোলসা ৬০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, চাপিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দাম নিয়েও অস্বস্তি রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। রিকশাচালক আলিম উদ্দিন বলেন, যা রোজগার করি তা দিয়ে ভালো মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব না। সপ্তাহে এক দিন বউ-বাচ্চাদের জন্য পাঙাশ মাছ কিনি; কিন্তু একটু বড় সাইজের মাছ কিনতে গেলেই ২০০ টাকার বেশি চায়। অন্য মাছ কেনার চিন্তাও করতে পারি না। বাজারেও যে অবস্থা ব্রয়লার মুরগি কেনার সামর্থ্যও আমার নেই।
একইভাবে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ওই দিন বিক্রি হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকায়। দেশি মুরগিও বাড়তি দামে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা আর খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে