Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

প্রস্তাবিত তামাক কর ও দাম নিয়ে প্রজ্ঞার বিশ্লেষণ

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

বেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক কর ও তামাকজাত দ্রব্যমূল্য বাড়ানো নিয়ে তাদের মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। প্রজ্ঞা জানিয়েছে, বাজেটে তামাক কর ও তামাকজাত দ্রব্যের দাম প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ানো হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে যদি এই কর ও মূল্য গৃহীত হয়, তাহলে তামাকজাত পণ্য আবার সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে পড়বে। তরুণ সম্প্রদায় তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে আরও উৎসাহ বোধ করবে। ফলে তামাকদ্রব্য ব্যবহারজনিত কারণে অসুস্থতা বাড়বে। মৃত্যু বাড়বে।

সামগ্রিকভাবে সরকারের জনস্বাস্থ্য ব্যয় বাড়াবে। প্রস্তাবিত বাজেটের ফলে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য মাত্র ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মানে শলাকা প্রতি মাত্র ৫০ পয়সা বেড়েছে (১১ দশমিক ১১ শতাংশ)। সম্পূরক শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৮ থেকে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে।

মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে আরও কম। ১০ শলাকা মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ টাকা (৪.৪৮ শতাংশ)। তুলনায় উচ্চ স্তরের সিগারেটের দামও খুব একটা বাড়েনি। ১০ শলাকার প্রতি প্যাকেট ১১৩ টাকা থেকে ১২০ টাকা (৬.১৯ শতাংশ) হয়েছে। প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চস্তরের ১০ শলাকার দাম ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা (৬.৬৭ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তিনটি স্তরেই সম্পূরক শুল্ক মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৩ টাকা (৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) ও ২ টাকা (৮ দশমিক ৭ শতাংশ) বাড়ানো হয়েছে এবং উভয় ক্ষেত্রেই সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আবারও বিড়ির দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্য দ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, তামাকজাত দ্রব্যের দাম তার তুলনায় অনেক কম বেড়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চিনি, আলু, আটাসহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৪০ শতাংশ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। বিড়ির দামে কোনো হেরফের হয়নি। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকজাত পণ্য আরও সস্তা হয়ে পড়বে। আর এটা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।

একই সঙ্গে যেহেতু তামাকজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম, তাই তামাকজাত পণ্যের দাম আগের চেয়ে আসলে অনেক কমে যাবে। এতে সব ধরনের তামাকজাত পণ্য আরও সহজলভ্য হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। এই কিছুদিন আগেই টোব্যাকোনমিকস ‘সিগারেট ট্যাক্স স্কোর কার্ড’ তৃতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সিগারেটের সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।

দাম, সহজলভ্যতা, করকাঠামো এবং খুচরা মূল্যে করের অংশ এই চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সিগারেট ট্যাক্স স্কোর কার্ড তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৫-এর মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ১৩, যা আগে ছিল ২ দশমিক ৩৮। মূলত সহজলভ্যতায় শূন্য পাওয়ার কারণেই বাংলাদেশের স্কোর অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৭০টি দেশের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের আওতায় টোব্যাকোনমিকস টিম এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ‘প্রজ্ঞা’-এর নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের জানিয়েছেন, ‘সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশই দখলে থাকে কম দামি সিগারেটের। এগুলোই বেশি বিক্রি হয়। এগুলোর খুচরা মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক খুবই সামান্য পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এতে তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারীদের তেমন নিরুৎসাহিত করবে না। তাই আমরা দাবি করেছিলাম, খুচরা মূল্য কমপক্ষে ৬০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৩ শতাংশ করা হলে এই স্তরের সিগারেটের সহজলভ্যতা কমবে, তরুণ জনগোষ্ঠী সুরক্ষা পাবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় কয়েক গুণ বাড়বে।’

উল্লেখ, বাংলাদেশে ৩৫ ভাগের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করেন। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যান। তামাকবিরোধী প্রতিষ্ঠান, অ্যাক্টিভিস্টদের আমলে নিলে, চূড়ান্ত বাজেটে তাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জনগণের ও সরকার বিরাট লাভাবান হতো। তাহলে প্রায় ৫ লাখ তরুণসহ মোট ১১ লাখের অধিক মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ