একটি প্রকল্পই সোনাদিয়া দ্বীপের অন্ধকারের কারণ
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃক্ষের একটি প্রকল্পই যেন অন্ধকারের কারণ সোনাদিয়া দ্বীপের।
সারা বাংলাদেশ যখন শতভাগ বিদ্যুতায়নের সুবিধাভোগী সেখানে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার এই দ্বীপটি যেন অন্ধকারের গল্পকার।
বিদ্যুতের আলো কেমন হয়, গরমে ঠান্ডা পানির স্বাদ কেমন তা কখনো অনুভব করতে পারেনি এই দ্বীপের মানুষরা।
‘বিগত সরকারের নেয়া একটি প্রকল্প আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। পল্লি বিদ্যুতের লাইন দেয়ার সব ব্যবস্থা করলেও বেজা সেই লাইন দিতে দেয়নি।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথাই বলছিলেন তিন যুগের বেশি সময় ধরে দ্বীপে নৌকা পারাপারের কাজ করে আসা মোহাম্মদ জামাল মাঝি।
তিনি বলছিলেন, ‘বিদ্যুৎ মিটার স্থাপনের কাজও শেষ করে ফেলেছিল পল্লি বিদ্যুৎ। আমরা মিটারের জন্য সরকারি যে খরচ সেটাও দিয়েছিলাম কিন্তু কেন আমাদের লাইন দেয়নি তা কখনো জানানো হয়নি।’
২০১৮ সালে বিদ্যুতের সুবিধা পাওয়ার আশায় দ্বীপের মানুষ যখন স্বপ্ন বুনছেন সেই সময় সেখানে বাদ সাধে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষ।
নামমাত্র মূল্যে সরকার থেকে সে সময় ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার জন্য সোনাদিয়া দ্বীপ লিজ নেয় বেজা কর্তৃপক্ষ।
সেখান থেকে জনবসতি উচ্ছেদের লক্ষে সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয় দ্বীপের মানুষকে। বঞ্চিত করা হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও- এমনটাই ভিউজ বাংলাদেশকে জানালেন কুতুবজুমের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শেখ কামাল।
তিনি বলেন, ‘সোনাদিয়ার পূর্বপাড়ায় বিদ্যুতের লাইন দেয়ার সব ব্যবস্থা করেছে পল্লি বিদ্যুৎ। কিন্তু বেজার নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে পুরো দ্বীপের মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
কিন্তু বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে স্থানীয়দের? বেজার লিজের কারণে শুধু বিদ্যুৎ সুবিধা নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা এমনকি সোনাদিয়া দ্বীপের মানুষের জন্য কয়েক বছরে কোনো বাজেট বা বরাদ্দ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। সরকারি প্রকল্প দূরে থাক সেখানে কোনো বেসরকারি প্রকল্প পর্যন্ত কাজ করতে পারে না মানুষের উন্নয়নের জন্য।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এইটা কেন হবে? সরকার এলাকা থেকে মানুষকে উচ্ছেদ করলে করবে, যেহেতু তারা দেশের জনগণ আমাদের ভোট দেয় তাই নায্য অধিকারতো দিতে হবে সেই মানুষগুলোকে।’
বেজা কর্তৃপক্ষ দ্বীপ লিজ নিয়েছিল, উচ্ছেদ করতে যেন সুবিধা হয় তাই সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে দ্বীপের ২ হাজারের বেশি মানুষকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড মহেশখালীর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল হাসান বলেন, ২০১৮ সালের দিকে বিশ্বব্যাংকের শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রজেক্টের আওতায় সোনাদিয়ায় বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করে পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড। অর্ধেক কাজ সম্পাদন করেই তাদের সেখানে কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে বেজা কর্তৃপক্ষ এবং সে সময় সোনাদিয়ার পূর্বপাড়ায় প্রায় ১০০টি মিটার স্থাপনের কাজও সমাপ্ত করে পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
তিনি জানান, যেহেতু সোনাদিয়া বেজার অধিগ্রহণে ছিল তাই বেজা কর্তৃপক্ষ চায়নি সেখানে বসবাস করা মানুষ যাতে বিদ্যুৎ সুবিধা না পায়, সেক্ষেত্রে দ্বীপের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করতে হিমশিম পোহাতে হবে বলে জানানো হয় বেজা কর্তৃপক্ষ থেকে।
তিনি আরও বলেন, সোনাদিয়ার জনসাধারণ কখনো বিদ্যুতের আলো দেখতে কেমন হয় সে সুবিধা পায়নি। তবে সেখানে পল্লি বিদ্যুতের একটি সঞ্চালন লাইন আছে আনসার ক্যাম্পে। এখন যদি বেজা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা না থাকে সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতেই পারে। যেহেতু সেখানে সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মতো ব্যবস্থা পল্লি বিদ্যুতের আছে।
মহেশখালী দ্বীপের পরিবেশ কর্মী এস এম রুবেল বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপ একটি পরিবেশ প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। সেই দ্বীপটিই লিজ দিয়েছে সরকার বেজা কর্তৃপক্ষকে। যা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। বর্তমানে দ্বীপের লিজের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত। সেহেতু সেই এলাকার মানুষদের ন্যায্য অধিকার বা নাগরিক সুবিধা ফিরিয়ে দেয়া উচিত সরকারের বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে