জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করুন
শুধু মানের দিক দিয়ে নয়, স্বায়ত্তশাসিত গবেষণাধর্মী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রাণ-প্রকৃতি বৈচিত্র্য রক্ষায় জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সুনাম আছে দেশে। জলাশয়, লেক, পুকুর আর সবুজ বনানীতে ঘিরে আছে পুরো ক্যাম্পাসটি। শীতের অতিথি পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় ক্যাম্পাসের লেকে। বড় বড় বৃক্ষরাজিতে হরেকরকম পাখির বাসা। জলে-জঙ্গলে নানারকম ক্ষুদ্র প্রাণের সমারোহ। ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি খোলামেলা প্রকৃতির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে বিশেষ প্রিয়; কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যত্রতত্র ভবন নির্মাণের কারণে সুন্দর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ম্লান হয়ে যেতে বসেছে।
গতকাল বুধবার (১৪ আগস্ট) পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন না মেনে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গাণিতিক ও পদার্থ অনুষদের ভবনের জন্য জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে, সেটি ওই এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আশপাশের পানি সব ওই জলাশয়ে জমা হয়। সেটা ভরাট করা হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ওই জলাশয় ভরাট করে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৬ সালে। ওই সময় ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছিল।
অধ্যাপক নূরুল আলম (সদ্য সাবেক উপাচার্য) ছাত্রলীগ ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে এখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। তিনি গর্হিত কাজ করে চলে গেছেন, কিন্তু তার প্রেতাত্মারা রয়ে গেছেন। সাম্প্রতিক ছাত্র-আন্দোলনে যখন দেশ উত্তাল, ওই সময়টি বেছে নিয়ে জলাশয় ভরাটের কাজ চলেছে। ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে গত মঙ্গলবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে মেরুদণ্ডহীন শিক্ষকরা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে গেছেন।
ছাত্রলীগের সহায়তায় তারা জলাশয় ভরাট করেছেন, নির্বিচারে গাছ কেটেছেন। ক্যাম্পাসে মেরুদণ্ড সোজা এমন শিক্ষকদের নিয়ে অতি দ্রুত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তারপর ভবন নির্মাণ শুরু করতে হবে। শুধু জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যায় নয়, আমরা জানি উন্নয়নের নামে দেশের অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-প্রকৃতি নষ্ট করা হয়েছে। প্রয়োজনে ভবন নির্মাণ অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু তার জন্য সুষ্ঠ পরিকল্পনাও দরকার।
এমন কোনো উন্মুক্ত স্থান, জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা যাবে না যে ক্ষতি আর কোনোভাবেই পূরণ সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানে ভবন বা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কোনো নির্দিষ্ট মহলের সুবিধাভোগ মোটেই কাম্য নয়। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা দেশের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে চাচ্ছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। আমরা চাই অন্তবর্তী সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সচেতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমরা চাই জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় সরকার ও বিশ্ববিদ্যায় প্রশাসন সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে