Views Bangladesh Logo

সুন্দরবনের বনদস্যুদের হাত থেকে মৌয়ালদের রক্ষা করুন

বিশ্বের সর্ববৃহৎ লোনা পানির (ম্যানগ্রোভ) বন সুন্দরবন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। মৎস্য-কাঠ আহরণ ছাড়াও সুন্দরবনের আশপাশের অনেক অধিবাসী মধু আহরণের ওপর নির্ভরশীল। গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে মধু আহরণ। মৌসুম চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। মধু সংগ্রহ করতে মৌয়ালদের যেতে হয় সুন্দরবনের গভীরে। তবে অনেক বছর পর হঠাৎ বনদস্যুদের উৎপাত বাড়ায় এ বছর দুশ্চিন্তা নিয়ে বনে যেতে হচ্ছে মৌয়ালদের।

গতকাল রোববার (৬ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কুমির-বাঘে ভয় নেই, যত ভয় ডাকাতে। গত শনিবার পর্যন্ত শুরুতে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছে মাত্র ৫৮টি। অথচ গত বছর এই দুই রেঞ্জ থেকে ৫২০টি অনুমতিপত্র নেন মৌয়ালরা। তাদের ভাষ্য, সুন্দরবনে নতুন করে দস্যুবৃত্তি শুরু হওয়ায় এমন পরিস্থিতি। কয়েকটি দস্যুদল বনজীবীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করছে। ওই টাকা দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন মৌয়ালরা। তাই মধু সংগ্রহের আগ্রহ হারিয়েছেন তারা।

স্থানীয় জেলে-বাওয়ালি ও মৌয়ালরা বলেন, সুন্দরবনে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকটি বনদস্যু দল থাকায় তারা মধু আহরণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। নিরীহ জেলে-বাওয়ালিরা বনদস্যুদের চাহিদা মতো মুক্তিপণ দিতে না পারায় হামলার শিকার হচ্ছেন। বনদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে বনে ঢুকলে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যার কারণে তারা আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে সুন্দরবনে যেতে পারছেন না।

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেল ভেঙে পালিয়ে আসা কয়েদি ও চিহ্নিত আসামিরাও সুন্দরবনে দস্যুতা শুরু করেছেন। তারা সুন্দরবনে মৎস্য আহরণে যাওয়া জেলেদের কাছ থেকে মাছ, টাকা, মুঠোফোনসহ সবকিছু কেড়ে নিচ্ছেন। এমনকি বনে ঢুকলে জেলেদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের চাঁদাও দাবি করছেন।

সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দীন এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এসব কারণেই সুন্দরবনের পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। ফলে রাজস্ব আয় কমছে। বিপরীতে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। সুন্দরবনের সার্বিক নিরাপত্তা না বাড়ানো হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। এবার মৌয়ালের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, বনদস্যু দমনে তাদের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। কয়েকটি অভিযানে বনদস্যু গ্রেপ্তার করাও হয়েছে। মৌয়ালদের সুরক্ষায় বন বিভাগ এবার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।

সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ অনেক বনজীবীর বংশগত পেশা। এ পেশা হারালে তাদের পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আমরা চাই সুন্দরবনের বনদস্যুদের হাত থেকে মৌয়ালদের রক্ষা করা হোক। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতা শুরু করা জরুরি। সুন্দরবনের মৌয়ালরা যেন বনদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পান এ ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই সুন্দরবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ