কুয়াকাটার সংরক্ষিত বনখেকোদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন
সাগরকন্যা কুয়াকাটা দেশের একমাত্র সমুদ্রসৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটিই দেখা যায়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই পর্যটনকেন্দ্রটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণ দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা নির্জন, নিরিবিলিই ছিল। ২০২১ সালে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা সেতু চালু হওয়ার পর ওই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যায়। তার সঙ্গে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের পুরো চিত্রই বদলে গেছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চলেরও মানুষ এখন কুয়াকাটা বেড়াতে যেতে পারেন অনায়াসে। পর্যটকদের জন্য কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান সমুদ্রের তীর ধরে বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেই বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার খবর অনেক দিন ধরেই পত্রিকায় আসছে; কিন্তু বনাঞ্চলটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষ তেমন কিছু করছে বলে কোনো খবর আসছে না।
গত ১৬ মে, রোববার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, সামুদ্রিক ভাঙন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি এবং বনদস্যুদের দৌরাত্ম্যে উজাড় হচ্ছে সৈকতের রক্ষাকবচ এ বন। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলবাসীর ঝুঁকি বাড়ছে। পটুয়াখালী বন বিভাগের তথ্যমতে, প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সৈকতের গঙ্গামতী, লতাচাপলী, খাজুরা ও ফাতরা এলাকার প্রায় ১৩ হাজার ৯৮৪ হেক্টর জমিতে রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
একসময় এখানকার দৃষ্টিনন্দন নারিকেল, তাল ও ঝাউবাগান পর্যটককে আকৃষ্ট করত। সাগরের অব্যাহত ভাঙনে নারিকেল ও তালবাগান এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে নিয়মিত বনের গাছ মারা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে গত ১৭ বছরে ভাঙন ও প্রাকৃতিক কারণে প্রায় ২ হাজার একর বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে। উজাড় হয়েছে ২ লক্ষাধিক গাছ।
যদি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বন ধ্বংস হয় তাহলেও একরকম সান্ত্বনা দেয়া যায় যে পরিবেশত গত কারণে বন উজাড় হচ্ছে, তাহলে এর বিরুদ্ধে একরকম ব্যবস্থা নিতে হবে; কিন্তু প্রাকৃতিক ধ্বংসের মাঝেই যদি মানুষও ধ্বংসের আয়োজন করে তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। এই কয়েক মাস আগেই পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল, বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে শত শত একর বনাঞ্চল।
তারপর দুর্বৃত্তরা রাত-দিন যখনই সুযোগ পাচ্ছে বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গাছ কাটার বৈধতা প্রমাণ করতে প্রয়োজনে তারা ইচ্ছে করেই গাছ মেরে ফেলছে, গাছে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। বনের জমিতে দীঘি কেটে বানানো হয়েছে মাছের ঘের। বন ধ্বংস বন্ধে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কোনো সুফল আসেনি। উল্টো প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে মামলা, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
কুয়াকাটার এই বনাঞ্চল কেবল সৌন্দর্যসৃষ্টির জন্য নয়, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচানোর জন্যও এ বন পটুয়াখালীবাসীর জন্য প্রকৃতির এক রক্ষাকবচ; কিন্তু আমাদের কিছু দুর্বৃত্তের কাজই হচ্ছে ক্ষুদ্রস্বার্থে বৃহত্তর স্বার্থ বিসর্জন দেয়া। কতিপয়ের স্বার্থে দেশের কত বড় সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে দিকে বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই নজর দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ বনাঞ্চল তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই, মানুষের হাতে যেন আর ক্ষতি না হয়। বরং কী করে এই বনকে রক্ষা করা যায় সেদিকেই সবার নজর দিতে হবে। তাই কুয়াকাটার বনাঞ্চল ধংস রোধ করতে হলে এসব কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে