চট্টগ্রাম বন্দরের সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে
রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, ওএসপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি। তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এস এম মনিরুজ্জামান দীর্ঘ ও বহুমুখী চাকরি জীবনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন জাহাজ, প্রতিষ্ঠান ও নৌসদর দপ্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর বন্দরের সমস্যা, সম্ভাবনা ও পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার হোসেন।
ভিউজ বাংলাদেশ : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব পালনে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? কীভাবে তা মোকাবিলা করছেন?
এস এম মনিরুজ্জামান : আমি ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল অপারেশন ও নিরাপত্তা। আপনারা জানেন সে সময়ে পুলিশ ছিল না, পর্যাপ্ত শ্রমিক ছিল না। বন্দরে প্রায় তেরশ আনসার ছিল, তারাও বিদ্রোহ করল। আমাদের তাদের অস্ত্র ম্যানেজ করতে হয়েছে। বন্দরের বিভিন্ন জায়গায় গেট বন্ধ ছিল সেগুলো সুরক্ষা দিতে হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বন্দরের স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন ধরনের হুমকি আসছিল। সেগুলো ম্যানেজ করে বন্দরের ভেতরের নাশকতা বা চুরি থেকে রক্ষা করতে হয়েছে। তা না হলে বন্দর লুটপাট হয়ে যেতে পারত। এখানে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করেছি। নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবিসহ যৌথ বাহিনী নিয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি হ্যান্ডেল করতে পেরেছি। এখন আমাদের চট্টগ্রামে বন্দরের সীমা অনেক বড়। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত বন্দর সীমা বিস্তৃত। এই পুরো এলাকার নিরাপত্তা আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করতে পেরেছি। আমাদের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল বন্দরের অপারেশন চলমান রাখা। জুলাইয়ের গণআন্দোলন, ইন্টারনেট সংক্রান্ত সমস্যা এবং পরবর্তী বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রায় এক মাসের অধিক বন্দরের অপারেশন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে এসময়ে কার্যত কোনো পণ্য পরিবহন হয়নি। তাছাড়া, জাহাজের ওয়েটিং টাইম বেড়ে যায় এবং পণ্য খালাস করতে দেরি হয়। চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় আমাদের প্রায় পঞ্চাশ হাজার কনটেইনার জমা হয়ে যায়। বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশন এবং তার সঙ্গে আবার বাড়তি কনটেইনার হ্যান্ডেল করে স্বাভাবিক পর্যায় নিয়ে আসা; প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। আমি যখন যোগদান করি, বলা হয়েছিল এটা এক বছরের মধ্যেও করা সম্ভব হবে না। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সমন্বিত উদ্যোগ নিই এবং কিছু ক্রিয়েটিভ কাজের মাধ্যমে দুই-তিন মাসে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক পর্যায় নিয়ে আসতে পারি। এটা আমাদের বড় ধরনের অর্জন না এর পেছনে এনবিআর, জেলা প্রশাসন, রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করেছি। এটাই আমাদের বড় শক্তি।
ভিউজ বাংলাদেশ : বন্দরে বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকলেও এখন সেই শঙ্কা কেটেছে কি? কলম্বোয় বিপজ্জনক ৯টি কনটেইনার ধ্বংসের বিষয়টি যদি বলতেন
এস এম মনিরুজ্জামান : এটা আমরা কলম্বোতে পাঠাইনি। চেষ্টা করেছিলাম পাঠানোর জন্য। ওখানে এগুলো পাঠাতে পরিবেশ ও আইনগত কিছু জটিলতা আছে, যার কারণে প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যায় বলে আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিই। চারটি ট্যাংকারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল দাহ্য পদার্থ ছিল যা যে কোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারত। এটা আমরা দ্রুতগতিতে বন্দর থেকে সরিয়ে ফেলি। বেসিক্যালি অকশন করে দেয়া হয়, যা এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনি জটিলতায় বিভিন্ন কারণে এটা দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে ছিল। আমরা অল্প সময়ে এটা অকশনের ব্যবস্থা করি, ফলে সরকার রাজস্ব পেয়েছে। আইটেমগুলো ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার হয়ে গেছে। আরও এমন বেশ কিছু ডেনজারাস কার্গো ছিল এক সময়, যা আমরা ক্লিয়ার করে ফেলেছি। অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ অল্প যতটা আছে আমরা স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা টেস্ট করছেন।
যেমন আমাদের ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি তারা এসে টেস্ট করছেন। এগুলো যদি ব্যবহার করা না যায়, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস করে দেব। বন্দর এখন বিপজ্জনক কার্গো হতে ঝুঁকিমুক্ত। আমাদের ১২০টি রিফার কনটেইনার (শিপিং কনটেইনার) প্রায় ৯ মাস ধরে প্লাগিন ছিল। এগুলোর মাধ্যমে মাংস এবং ফলমূল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে কনটেইনারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে এগুলো ডিসপোজ করা কঠিন ছিল, জায়গা পাচ্ছিলাম না। পাশাপাশি পরিবেশের ছাড়পত্রের ব্যাপার ছিল। পরে জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে সেগুলো ডিসপোজ করি। এর জন্য বিদেশে যারা মেইন লাইন অপারেটর তারা অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ধরনের কাজ বিগত ১০-১৫ বছরে হয়নি। সেটা আমরা ৩-৪ মাসের মধ্যে করতে পেরেছি। অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে কী কী কার্যক্রম শুরু করেছেন?
এস এম মনিরুজ্জামান : আপনারা জানেন, আগে জাহাজ বন্দরে আসতে কম বেশি প্রায় আট দিন অপেক্ষা করতে হতো। পক্ষান্তরে এখন জাহাজগুলো সরাসরি চলে আসে। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ আমরা জাহাজের কিছু ব্যবস্থাপনা করেছি। কিছু জাহাজের নিজস্ব ক্রেন আছে যাকে গিয়ার্ড ভেসেল বলে। কিছু জাহাজের নিজস্ব ক্রেন নেই। আমাদের এনসিসিটিতে সাধারণত ক্রেনবিহীন জাহাজগুলো আনি। আর জিসিবিতে ক্রেন যুক্ত গিয়ার্ড জাহাজ অথবা বন্দরের ক্রেন ব্যবহার করে এ ধরনের জাহাজ আনা হয়। অন্যদিকে গিয়ারলেস ভেসেল NCT/ CCT-তে আনা হয়। আমরা এখন গিয়ারলেস এবং গিয়ারড ভেসেল সমন্বয় করি, যাতে শতভাগ জেটি-বার্থ ব্যবহার করতে পারি এবং যে কোনো জাহাজ এলে যেন সহজে ভিড়তে পারে। সেজন্য এই সমন্বয়টা করার ফলে গিয়ার ভেসেল এবং গিয়ারলেসের একটা সামঞ্জস্য রেখে আমদানিকারকদের উদ্বুদ্ধ করি এভাবে জাহাজ আনার জন্য। উনারা এটাতে অত্যন্ত আগ্রহী হন। দ্বিতীয়ত, আগে ছোট জাহাজ আসত। একটা জাহাজে ৮০০-১২০০ কনটেইনার নিয়ে আসত। আমরা মাক্সিমাম ক্যাপাসিটি জাহাজ আনার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। যেটাকে সিসি অ্যাগ্রিমেন্ট বলে। যে একলাইনারের সঙ্গে আরেক লাইনারের সমন্বয় যাতে জোরদার করে। ফলে বড় জাহাজগুলো অনেক কার্গো নিয়ে আসে। দেখা গেছে যে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কনটেইনার একবারে নিয়ে আসতে পারে। এ জন্য জাহাজের সংখ্যা কমলেও ক্যাপাসিটি বেড়ে যায়। এতে খরচও কমে যায়, ব্যবস্থাপনা দ্রুত হয়ে যায়। এজন্য যুগান্তকারী অবদান আমরা অর্জন করতে পেরেছি।
পরবর্তী বিষয় হলো হলো বন্দরের ভেতরের জায়গা অকুপায়েড ছিল। বিভিন্ন জায়গায় ডিসিপ্লিন ছিল না, যেমন: ট্রাফিকডিসিপ্লিন, কনটেইনারের ম্যানেজমেন্ট। তাছাড়া ভেতরে অনেক আইটেম ছিল, যেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। যার ফলে জায়গা বেড়েছে। আগে জায়গা কম থাকার ফলে ব্যবস্থাপনা অনেক দুরুহ হতো। এফিসিয়েন্সি অনেক কমে যেত। গতি কমে যেত। এখন এসকল কাজে সমন্বয়ের ফলে শৃঙ্খলা ফিরেছে, হ্যান্ডলিং ফাস্ট হয়েছে। নেক্সট পয়েন্ট হলো টেকনোলজি। টেকনোলজির ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করছি। ফুল অটোমেশনে যাব, যেটা আমরা বলছি মেরিটাইম পোর্ট সিঙ্গেল উইন্ডো করছি। এগুলো করার ফলে কাস্টমসে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং আগে লাগত ছয় থেকে সাত দিন। এখন তিন থেকে চার দিনে হয়ে যাচ্ছে। কারণ কাস্টমস আমাদের সঙ্গে একইভাবে স্পিড বাড়িয়েছে। ফলে অনেক ধরনের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং স্পিড আসছে। সম্মিলিতভাবে কাজ করাতে এটা সম্ভব হয়েছে।
ভিউজ বাংলাদেশ : নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় কতটুকু অগ্রগতি বেড়েছে?
এস এম মনিরুজ্জামান : কাজটা শুরু হয়েছে ২০১৭ থেকে। এটা মূলত ২০১৩ সাল থেকে জার্মানির একটা কোম্পানি এডিপির অর্থায়নে মাস্টারপ্ল্যান করতে গিয়ে বলে যে, টার্মিনাল আমাদের করতে হবে। সেটার প্রসেসটা শুরু হয় ২০১৭ সালে। তখন জাস্ট একশ চৌষট্টি একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছিল। আমার যদি ল্যান্ড না থাকে তাহলে ইনভেস্টমেন্ট কোথা থেকে আসবে। তখন এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। এটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটার ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ ইনভেস্টমেন্ট নির্ভর করছে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট নির্ভর করছে। এই বিষয়গুলো জেলা প্রশাসককে বোঝানোর পর দুই মাসের ভেতর পাঁচশ একর জমি অধিগ্রহণ করি। আমরা এখন ল্যান্ডলর্ড পোর্ট হয়ে গেছি। এখন কিন্তু অনেক দেশের প্রতিনিধি, ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লোকজন আসছে। সবাই আগ্রহী ইনভেস্টমেন্ট করতে। সিংগাপুর, কোরিয়া, ইউ, সৌদি আরব, ইউই, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইনভেস্ট করতে আগ্রহী। এখন আমাদের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে দিতে হবে যা অলমোস্ট রেডি। এই ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারব এবং আশা করি, আগামী মাসের মধ্যে সরকার অনুমোদন দিয়ে দেবে। এই যে কাজটা পাঁচ মাসে করা হয়েছে, এটা গত ৭-৮ বছরে সম্ভব হয়নি। এটা আমাদের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুফল সাধারণ মানুষ এভাবে পাচ্ছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: চট্টগ্রাম বন্দরকে ডিজিটালাইজেশন এবং আধুনিকীকরণে আরও নতুন কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কী?
এস এম মনিরুজ্জামান : ডিজিটালাইজেশন এখন এক নম্বর অগ্রাধিকার বলে আমি মনে করি। যেমন আমাদের ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ে। পোর্ট সিঙ্গেল উইন্ডো হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পোর্টে নিজস্ব একটা অ্যাপলিকেশন আছে যাকে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম বলে। এটা ইউএস থেকে নেয়া। আরেকটা কাস্টমসের জন্য আছে এসাইকোডা। কাস্টমস আর আমাদের দুটিতেই ইন্টার অপারেবল হতে হবে। এটা আমাদের আমদানির ক্ষেত্রে হচ্ছে। তবে, রপ্তানির ক্ষেত্রে এটি এখনো প্রক্রিয়াধীন। হয়তো বা আমরা খুব অল্প সময়ে করে ফেলব। নেক্সট পয়েন্ট হলো ওরাকল, নাভিস, ডেটাসফট এবং আমাদের টেকনিক্যাল টিম নিয়ে বেশ কয়েকবার মিটিং করেছি। সঙ্গে ইবিএল ব্যাংককে সম্পৃক্ত করেছি।
সম্মিলিতভাবে টোটাল কাস্টমস এবং পোর্টের অপারেশনটা সিঙ্গেল উইনডোতে নিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ। যেটা হবে পোর্ট সিঙ্গেল উইনডো। পোর্ট সিঙ্গেল উইনডোর মধ্যে অনেক ধরনের নতুন বিষয় আছে, যেটা কমন নয় অন্যান্য দেশের সঙ্গে সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর সুফল দুই-তিন মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে। আরেকটা সুসংবাদ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমরা সাপোর্ট চেয়েছি। তাদের হেডকোয়ার্টার থেকে সিঙ্গেল উইনডো শুধু আমার পোর্টের জন্য নয়, আমাদের সব পোর্টের জন্য ফ্রি অব কস্ট কম্পিলিটলি করে দিতে চাইছে। শিগগিরই তারা একটা প্রস্তাব পাঠাবেন মন্ত্রণালয়ে এবং আমাদের। উনাদের সাপোর্ট নিয়ে এর মাধ্যমে হোয়াইট এবং ব্ল্যাক শিপিং কন্ট্রোল, সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ, ড্রাগস ট্রাফিকিং ইত্যাদি কন্ট্রোল করা যাবে। এতে করে পোর্টের সিকিউরিটিগুলো সিস্টেমের ভেতর চলে আসবে। তখন আন্তর্জাতিক মানের টেকনোলজিস পোর্ট হবে ।
এস এম মনিরুজ্জামান : আমি রাষ্ট্রের একটা দায়িত্বে আছি। তাই আমি মনে করি আমি রাষ্ট্রের একটা অংশ। কাজেই আমার ওপর চাপ দেয়া মানে রাষ্ট্রের ওপর চাপ দেয়া। সেজন্য এগুলো আমি কখনো বিবেচনায় নিই না। রাষ্ট্রের জন্য এবং মানুষের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যেটা সঠিক মনে করব তার জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করতে রাজি। কাজেই সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কোনো চাপের কাছে মাথা নত করব না। গত পাঁচ-ছয় মাসে তা আপনারা দেখেছেন; আমি কোন পথে কাজ করছি। এর সুফল কিন্তু সাধারণ মানুষ পাচ্ছে। আমি আসার পর ইচ্ছে ছিল সিন্ডিকেট ভাঙার। এরপর একটা রিপোর্ট হয়েছিল সিন্ডিকেট ভাঙার কারণে বন্দরে ২৫ শতাংশ খরচ কমে গেছে। এটা কিন্তু আমার রিপোর্ট না। রিপোর্ট করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট। সিন্ডিকেট ভাঙতে গিয়ে বিভিন্নভাবে ইন্টারফেয়ারেন্স আসছে। আমি এগুলো কেয়ার করি না। আমি বলছি সুন্দর একটা নীতিমালা করব। নীতিমালা করে পেপার সার্কুলার দেব। সার্কুলারে যারা কোয়ালিফাই করবে তাদের মোস্ট ওয়েলকাম। আমি বলি পোর্ট সবার। সবাই পোর্টের জন্য। পোর্ট আমারও নয় আবার কোনো ব্যক্তিরও নয়। সে হিসেবে আমি এটাকে ওপেন করে দেব। এটা যেন জনবান্ধব হয়। মানুষ যেন পোর্টকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারে। সেজন্য সিন্ডিকেট রাখতে দেব না। যে চ্যালেঞ্জগুলো এখন আসছে সেটা হলো আগের কিছু লোক রয়ে গেছে, সবাই তো চলে যায়নি। উনাদের কিছু কিছু ইনফ্লয়েন্স কাজ করে। আমি বলছি কাজ করতে হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে, ন্যায়ের ভিত্তিতে, ন্যায্যতার ভিত্তিতে। এটা করলে আপনারাও ভালো থাকবেন। জনগণও ভালো থাকবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড গড়েছে এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে। এই গতিশীলতা বজায় রাখতে আর কী কী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন?
এস এম মনিরুজ্জামান : আসলে এটা শুধু কনটেইনার নয়। আমরা কিন্তু জেনারেল কার্গোর অতীতের রেকর্ডও ভেঙে ফেলেছি। প্রায় ১২৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন জেনারেল কার্গো আমরা হ্যান্ডলিং করেছি। যেটা অতীতে সব রেকর্ড ভেঙেছে। তারপর কনটেইনার। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে গেলে কিছু কিছু রিফর্ম করতে হবে।
আইনগত কিছু রিফর্ম আছে। তারপর কাস্টমস এবং পোর্টের কিছু বিষয় আছে। যেখানে আইনগত পরিবর্তন আনা দরকার। নতুন সংযোজন করা দরকার। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই সংস্কারগুলো হয়ে গেলে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। দ্বিতীয়ত, যে মাক্সিমাম হ্যান্ডলিং হয় পোর্টের ভেতরে। আমাদের ১৯টি প্রাইভেট অফ ডক এবং পোর্টের ২টিসহ মোট ২১টি অফ ডক আছে। এই অফ ডকগুলো কার্যকর করতে হবে। এখন অফ ডকে আমরা জিনিসপত্র না পাঠিয়ে ম্যাক্সিমাম পাঠাই পোর্টের ভেতরে। পোর্টের এবিলিটি কমে যাচ্ছে। পোর্টের ভেতরে করলে কাজের টাইম, হ্যান্ডেলিং টাইম বেড়ে যাবে। খরচও বেড়ে যাবে।
এজন্য সাস্টেইনেবল করতে গেলে কীভাবে অফ ডকগুলোকে আরও কার্যকর করা যায়, সেটা করলে পোর্টের সক্ষমতার পাশাপাশি ট্রাফিক কনজেশন সহজে কমে যাবে। ই-টিকিটিং করার ফলে অনেক ট্রাফিক কনজেশন কমে গেছে। আগে ১৫-২০ মিনিট ওয়েট করতে হতো একটা ট্রাককে। এই সিস্টেমটা করতে অনেক রেস্ট্রিকশন ছিল। গেটগুলোতে এখন কোনো গাড়ির লাইন নেই। পোর্টের অপারেশন অনেক উন্নত হয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তন, সংস্কারগুলো আনতে হবে। কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যেসব কার্গো মিস ডিকলাররেশন হয়, আন্ডার ইনভয়েস অথবা ওভার ইনভয়েস করে নিয়ে আসে। ফলে দেখা যায় কার্গোগুলো ডিটেনশন হয়ে যায়। এভাবে জমা হয়ে পড়ে। পরে অ্যাকশন করতে অনেক ঝামেলা হয়।
এগুলোর জন্য আইনগত কিছু পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি এবং টেকনোলজিস এডপ্ট করতে চাচ্ছি। ভবিষ্যতের জন্য কনসিসটেন্সি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেটা সাসটেইন এবিলিটির কথা বললেন। সাসটেইন এবিলিটির প্রিকন্ডিশন্ড হলো কনসিসটেন্সি ও লিডারশিপ। অর্থাৎ সঠিক নেতৃত্ব এখানে আসতে হবে। তাহলে দেখা যাবে হয়তো বা পোর্ট আরও ভালো করতে পারে। সেজন্য সঠিক নেতৃত্ব যদি থাকে এবং সেই ধরনের গুণাবলি নিয়ে কাজ করলে আমার মনে হয় ভবিষ্যতে এটা ভালো হবে। আরেকটা বিষয় হলো মেরিটাইম পোর্ট স্ট্র্যাটেজি, এটা বাংলাদেশে ছিল না। এটা আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় কনসিভ করেছেন। মন্ত্রণালয়ে এটা নিয়ে একাধিকবার মিটিং হয়েছে। জাইকা আমাদের সাহায্য করছে। আশা করছি কাজটা এই বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এটা হয়ে গেলে কী হবে। ধরুন আগে কোনো পোর্টের মিশন গাইড ছিল না। ভিশন/ মিশন না থাকলে যে যখন যেদিকে ইচ্ছে চলতে থাকবে। সাসটেইনেবল হবে না। এটার জন্য আমাদের একটা ন্যাশনাল মেরিটাইম পোর্ট স্ট্র্যাটেজি দরকার। এটা সব দেশে আছে, আমাদের নেই। সেটা আমরা করছি। এটা হয়ে গেলে একটা মাইলফলক হবে। এটা আমাদের ভবিষ্যতের সাসটেইন অ্যাবিলিটি মেইনটেইন করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ভিউজ বাংলাদেশ : পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআইকে সম্পৃক্ত করেছে। এটা কতটা কাজের গতি আসবে বলে মনে করেন?
এস এম মনিরুজ্জামান : আরএসজিটি সৌদি আরবকে দেয়ার বিষয়ে বলতে চাই যে, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। তথাপিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা এটা নিয়ে স্টাডি করি। আমরা সেখানে ডিটেইলস আলোচনা করি। পরে স্টাডি করে দেখেছি, এটা ভালো একটা কন্ট্রাক্ট করেছে। নীতিমালায় আন্তর্জাতিক কন্ট্রাক্টে যে ধারাগুলো থাকে সেটা ফলো করা হয়েছে। সেদিক থেকে নেতিবাচক কিছু পাইনি। যেটা পেয়েছি এই টার্মিনাল করতে আমাদের খরচ হয়েছে ১২শ কোটি টাকার মতো। সেখান থেকে আমরা সাইনিং মানি পেয়েছি ২০ মিলিয়ন ডলার। পুরোটা আমাদের অ্যাকাউন্টে। তার পর এখানে বাইশ কোটি টাকার টার্মিনাল ইক্যুইপমেন্ট বসাতে হবে যেমন জেটি ক্রেন। বাইশ কোটির ভেতরে সরকারের ২৬ শতাংশ ট্যাক্স হবে। তার মানে এখানে সরকার আরও ৫৫০ কোটি টাকা পাবে। এটার ক্যাপাসিটি হলো পয়েন্ট ফাইভ মিলিয়ন টিউ। এখানে সকল ধরনের ইক্যুইপমেন্ট নেই বলে আরএসজিটি হান্ড্রেড পার্সেন্ট অপারেশনে যায়নি। কিন্তু, পয়েন্ট ফাইভ মিলিয়ন টিউসের ক্যাপাসিটি চার্জ আমরা উনাদের কাছ থেকে পাচ্ছি। এটা আমাদের রেগুলার পে করছেন। নেক্সট হলো উনাদের সিইও ছাড়া বাকি সবই আমাদের বাংলাদেশি কর্মচারী। তারা সৌদি কোম্পানির সঙ্গে তুলনামূলক বেতনে চাকরি দিচ্ছে। নেক্সট হলো এখানে একটা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেটা আমাদের এখানে আগে ছিল না । তারা আন্তর্জাতিক লেভেল মেইনটেইন করছে। আপনারা জেনে থাকবেন যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডিপি ওয়ার্ল্ড পাঁচটা পোর্ট অপারেট করে এবং সিঙ্গাপুর চারটি পোর্ট অপারেট করে। সেজন্য, আমরা এটা যত করব বিদেশি অপারেটর তত আসবে। এতে আমাদের এখানে অ্যাফিসিয়েন্সি বাড়বে। বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি বাড়বে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যে, এটার মাধ্যমে দেশের জন্য অনেক বেশি রেভিনিউ আর্ন হবে।
এজন্য আমরা বে টার্মিনাল প্ল্যান করেছি, যেখানে সিঙ্গাপুর আসবে এবং এখানে ইউএস আসবে। জেনারেল টার্মিনাল হলে আরেকটা দেশ আসবে। যত দেশ আসবে ততো কমপিটিশন বাড়বে। ততো ইনভেস্টমেন্ট হবে। ততো আমাদের বিদেশিদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হবে। যত যোগসূত্র তৈরি হবে ততো সেতুবন্ধন হবে এবং ততো বৈদেশিক সম্পর্ক ভালো হবে, মানে সবদিক থেকে লাভবান হবে। এজন্য আমরা মনে করি যে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি বিষয় দেখেন, আমাদের পোর্টের ভবিষ্যতে সক্ষমতা যদি না বাড়ে তাহলে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আসবে না। আমরা যেমন ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টে যাচ্ছি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং কোরিয়ার সঙ্গে। অ্যাগ্রিমেন্ট হয়ে গেলে আমাদের ট্রেড অনেক বেড়ে যাবে। আমরা যেটা মূল্যায়ন করে দেখেছি ৫ মিলিয়ন টিউস হয়ে যাবে ২০৩০-এর ভেতর। ২০৩০ ভেতরে ৫ মিলিয়ন টিউস হলে তা হ্যান্ডেলিং করার ক্যাপাসিটি থাকতে হবে। এখানে যদি বিদেশিরা না আসে, সে ধরনের সক্ষমতা যদি না হয় তাহলে দেখা যাবে পোর্ট কার্যকারিতা হারাবে। এ জন্য পোর্টকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের আরও ইনভেস্টমেন্ট আছে। পোর্টের ওপর ভিত্তি করে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বাড়বে। দেশে যাতে কর্মসংস্থান হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যেন আরও সুযোগ সৃষ্টি হয় তার জন্য আমাদের ধারণা বে টার্মিনালের মাধ্যমে আমাদের প্রায় ২০-৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে যাবে। এটা বিরাট একটা বিষয়।
ভিউজ বাংলাদেশ: চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন নিয়ে কী কী পরিকল্পনা নিয়েছেন এবং আগামীতে আরও কী কী পদক্ষেপের পরিকল্পনা আছে?
এস এম মনিরুজ্জামান : আমি পোর্ট স্ট্র্যাটেজির কথা বলেছি; টেকনোলজিসের কথা বলেছি; তারপর আমরা আইনের কিছু সংস্কারের কথা বলেছি যেখানে কাস্টমস এবং পোর্টের অপারেশন আরও গতিশীল হয় এবং আরও জবাবদিহিমূলক হয়। তারপর হলো আমাদের ক্যাপাসিটি বাড়ানোর জন্য আমরা যেটা করছি যে, লালদিয়ায় একটা এপিএম টার্মিনাল হচ্ছে মার্ক্সলাইনের সঙ্গে, যেটি একটি ড্যানিশ কোম্পানি। এটা হলে পয়েন্ট ফাইভ টিউসের সক্ষমতা বাড়বে। আমরা নিজস্ব কিছু জায়গায় ইয়ার্ড সার্ভিস বাড়াচ্ছি। তারপর বে-টার্মিনালের ওখানে ২ হাজার ট্রাক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা করছি। বর্তমানে রাস্তায় ধারে ট্রাকের লাইন থাকে, তা আর থাকবে না। ড্রাইভার, হেলপারদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমনভাবে এটা করছি যাতে এখানে ব্যবহারবান্ধব একটা টার্মিনাল হয়। এখন যে ট্রাফিক কনজেশন দেখছেন এগুলো কমে যাবে। কাজের গতি বেড়ে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা টার্মিনাল বাড়াতে চেষ্টা করছি। যেমন পানগাঁওয়ে আমাদের টার্মিনাল আছে- ইনল্যান্ড রিভার টার্মিনাল।
এই ইনল্যান্ড রিভার টার্মিনালটা কীভাবে আন্তর্জাতিক টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় তার জন্য মেইন লাইন অপারেটরদের সঙ্গে-এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। ভবিষ্যতে আরও কিছু টার্মিনাল বাড়ানোর পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। ঢাকা চট্টগ্রামের সঙ্গে কীভাবে কার্গো পরিবহনের জন্য স্পেশাল রেল লিংক করা যায়। সেটা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। অনেকে আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন তারা এখানে বিনিয়োগ করতে চায়। বাংলাদেশে এনার্জি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। মাতারবাড়ীতে আমাদের এনার্জি টার্মিনাল করার চিন্তা আছে। এদিকে কোথায় এনার্জি টার্মিনাল করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এভাবে আমরা চাচ্ছি যে, ভবিষ্যতে আমাদের দেশের জন্য একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া। বাংলাদেশ যেন কনটেইনারাইজড জাহাজ চলাচলে অত্র অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, চট্টগ্রাম-মহেশখালী-কক্সবাজার এলাকা যেন আমাদের দেশের জন্য ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র এবং বন্দর বাংলাদেশের জন্য একটি Growth Engine হয় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
ভিউজ বাংলাদেশ: চট্টগ্রাম বন্দর ও মাতারবাড়ী প্রকল্পসহ ৬ মাসে আপনার উল্লেখযোগ্য কাজের সাফল্যের কথা যদি বলতেন।
এস এম মনিরুজ্জামান: আপনাকে বলেছি, জাহাজের পণ্য বহিঃনোঙর থেকে একদিনে জেটিতে চলে আসছে। চিটাগং পোর্টের ইতিহাসে কখনো কেউ এটি চিন্তা করেনি। দ্বিতীয়ত, কনটেইনার হ্যান্ডেলিং তিন-চার দিনে চলে আসছে। তারপর ৩৬ শতাংশ আমাদের গ্রোথ হয়েছে, যা রেভিনিউ আয়ের ক্ষেত্রে এটা বিরাট ব্যাপার। সব মিলিয়ে টোটাল ইনকামের ওপর পজিটিভ ইম্প্যাক্ট হয়েছে। মানুষের ভোগান্তি বহু মাত্রায় কমেছে। ছাত্র জনতার আন্দোলন, সাত দিন ইন্টারনেট বন্ধ, এরপর বন্যা হলো। এতকিছুর পরে ৫ দিনের বন্যায় আমাদের ঢাকা-চিটাগাং সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য জোগানের কাজ গতিশীল করা হয়। তা না হলে পরবর্তীকালে কিন্তু সিরিয়াসভাবে বাজারে ভোক্তাদের ওপর একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারত। এই যে সাপ্লাই চেইনটাকে আমরা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এটাই আমাদের জন্য বিরাট সাফল্য। পাশাপাশি আমাদের রুটিন কাজ তো আছেই। সব কাজ আমরা করছি। আমরা ২৪ ঘণ্টা রিয়েল টাইমে কাজ করি এবং কোনো কাজ ফেলে রাখি না। এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে টিম স্পিরিট বা মোটিভেশন এর মাধ্যমে সব কাজ সম্পাদনের জন্য। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে কাজের যে কর্মমুখরতা চলে এসেছে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
ভিউজ বাংলাদেশ : দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এস এম মনিরুজ্জামান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে