৩ দিনে সংগ্রহ ৩ কোটি
গণত্রাণ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের ১১ জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এ বন্যায় ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি পরিবারের ৫৫ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় দেশের আপামর জনসাধারণ বন্যার্তদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। থেমে নেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও।
কঠিন এই সময়ে বন্যা পরিস্থিতি মোকবেলায় তাদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ কর্মসূচি চালু রয়েছে। এই কর্মসূচির শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা গেছে। এতে তিনদিনে শিক্ষার্থীদের বন্যা তহবিলে জমা পড়েছে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
শুধু নগদ টাকাই নয়, সাধারণ মানুষ বন্যার্তদের সহায়তায় শুকনো খাবার, পানি, ওষুধ, পুরাতন কাপড়, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করছেন।
রবিবার সরেজমিনে ঢাবির টিএসসি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই সেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ মানুষ জড়ো হচ্ছিলেন। কেউ নিয়ে এসেছেন শুকনো খাবার, পানি, ওষুধ, আবার কেউ এনেছেন পুরাতন কাপড় ও কম্বল। লাইন ধরে তারা এসব দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে।
তাদের ভাষ্য, ছোট্ট ছোট্ট এসব সহযোগিতা কঠিন এই সময়ে বন্যা কবলিত মানুষের কষ্ট লাঘবে কিছুটা হলেও কাজে আসবে।
টিএসসির গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে, ত্রাণের জন্য রাখা জরুরি পণ্যের স্তুপ। কোথাও চাল-ডালের বস্তা, আবার কোথাও সারিবদ্ধভাবে রাখা অসংখ্য পানি ও তেলের বোতল। জরুরি ওষুধ, টর্চলাইট এবং অন্যান্য সরঞ্জাম টিএসসির দোতলায় রাখা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিএসসির মাঠে বসে গভীর রসত পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রী প্যাকেট করছেন।
প্যাকেট শেষে প্রতিদিন রাতেই ত্রাণ নিয়ে ট্রাকগুলো বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে।
টিএসসিতে ত্রাণ সামগ্রী দিতে আসা আবদুল্লাহ আদিব নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, 'আমি পত্রিকা, টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছি কীভাবে মানুষ বন্যার পানিতে আটকে পড়েছে। তাদের চোখে পানি, মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। এই দুর্যোগের সময় আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তাই আমি এবং আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে খাবার, ওষুধ এবং কিছু নগদ টাকা দিতে এখানে এসেছি। সামর্থ অনুযায়ী সবাইকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে বলেও জানান তিনি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত শুক্রবার গণত্রাণ কর্মসূচি শুরু করে। গতকাল রোববার ছিলো কর্মসূচির তৃতীয় দিন। এদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত নগদ ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন গত শনিবার শুধুমাত্র বুথ থেকেই ২ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭০ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর গত শুক্রবার কর্মসূচির প্রথম দিন নগদ ও মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা জমা পড়ে। এর মধ্যে নগদ অর্থ ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ২৩ হাজার ১৭৩ টাকা। এ নিয়ে মোট সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, 'ত্রাণ সংগ্রহের চেয়ে এর সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে আমাদের মূল উদ্দেশ্য সফল হবে না। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে, না হলে একই এলাকায় বারবার ত্রাণ চলে যাবে। শুধু তাই নয়, এমন হলে অনেকের কাছেই ত্রাণ পৌঁছাবে না।'
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য এক সমন্বয়ক প্রীতম সোহাগ বলেন, এই সংকটের সময়ে সাধারণ মানুষের এমন উদ্যোগ প্রমাণ করে আমাদের মধ্যে এখনো মানবিকতা বেঁচে আছে। যেকোনো বিপর্যয় মোকাবিলায় আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামছে, কিন্তু মানুষের সহযোগিতা এবং ভালোবাসার ঢল যেন থামার নয়। মানুষ মানুষের জন্য এবং এই সংহতি আমাদের আশা দেয়, সাহস দেয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে