পুশ-ব্যাক পুশ-ইন নয়, কূটনৈতিক সমাধান জরুরি
ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে পুশ-ব্যাক করে দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। অবৈধ বসবাসকারী বাংলাদেশ সন্দেহে ভারত সম্প্রতি এমন নাগরিকদেরও বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে যাদের মধ্যে গুজরাতের নাগরিকও ছিল এমন অভিযোগ উঠেছে। শুধু ভারতের গুজরাত এবং রাজস্থানেই গত তিন সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে চিহ্নিত করেছে ওই রাজ্যগুলোর পুলিশ। তাদের দাবি, এই চিহ্নিতরা বেআইনিভাবে বাংলাদেশ থেকে এসে বসবাস করছিলেন।
আবার রাজস্থান থেকে যারা ধরা পড়েছেন, তাদের মধ্যে ১৪৮ জনের প্রথম দলটিকে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে বুধবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ত্রিপুরার আগরতলায়। বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে যে পুশ-ব্যাকের চেষ্টা হয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ রাজস্থানে ধরা পড়া কথিত বাংলাদেশি কি না, তা নিশ্চিত করা যায়নি। গুজরাত ও রাজস্থান- দুই রাজ্যের পুলিশই জানিয়েছে, বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের পরিচয় তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন তাদের সবাইকেই ফেরত পাঠানো হবে। ওড়িশাসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যেও বাংলাদেশের এমন নাগরিকদের ধরা হচ্ছে যারা পুলিশের কথায় ‘অনুপ্রবেশকারী’।
গতকাল রোববার (১৭ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ভারত যেভাবে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মানুষ ঠেলে (পুশ-ইন) দিচ্ছে তা আইনসিদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারতকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশি কেউ যদি অবৈধভাবে ভারতে থেকে থাকেন তবে ভারত যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠায়। আর বাংলাদেশে যদি অবৈধ ভারতীয় নাগরিক থেকে থাকেন তাদেরও যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। সে জন্য ভারতীয় পক্ষকে বলা হয়েছে, তারাও যেন পুশ-ইন না করে যথাযথ চ্যানেলে ফেরত পাঠায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, গতকাল শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে ভারত পুশ-ইনের চেষ্টা করেছে যা বিজিবি, আনসার এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় প্রতিহত করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে ও সহযোগিতা করলে ভারত পুশ-ইন করতে পারবে না।
পুশ-ইন, পুশ-ব্যাকের বিষয়টি কোনোভাবেই জোরজবরদস্তি করে হতে পার না। এটা একটা আইনগত বিষয় এবং কূটনৈতিক বিষয়। গুজরাত ও রাজস্থানে যাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে ধরা হয়েছে তাদের কাউকেই প্রায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আটক করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন সামাজিক কর্মকর্তারা। ভারতীয় মিডিয়াও এ নিয়ে সমালোচনা করেছে। সীমান্তে পুশ-ব্যাক বা পুশ-ইন এমন একটা পদ্ধতি যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেয়া হয়ে থাকে। ভারতের দিক থেকে যেটা পুশ-ব্যাক, বাংলাদেশের চোখে সেটাই পুশ-ইন। এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই ভারতে; কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই পদ্ধতি চলে আসছে, যেটা আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই স্বীকার করে না।
বাংলাদেশের তিন দিকে ভারতের সীমান্ত থাকায় অনেকেই নানা চোরাপথে ভারতে যায় সত্য, নানা ঘটনায় তারা হয়তো অনেকে ভারতে থেকেও যায়; কিন্তু তাই বলে তাদের জোর করে ঠেলে দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়, বরং এর কূটনৈতিক সমাধান হওয়াই জরুরি। আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে শিগগিরই এর একটা কূটনৈতিক সমাধান করবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তেও নজরদারি জোরদার করা জরুরি, যেন কেউ অবৈধভাবে ভারতে যেতে না পারে এবং পুশ-ইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশও করতে না পারে। রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে আমরা দেখছি বাংলাদেশ বিদেশি অবৈধ নাগরিকদের অনুপ্রবেশের এক স্বর্গ হয়ে গেছে। যে যেভাবে পারছে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, পারলে জোর করে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, ঘনবসতির ছোট একটি দেশের জন্য তা বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতোই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে