দুদক নিয়ে রয়ে গেল কয়েকটি প্রশ্ন
জন্মলগ্ন থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরিণত হয়েছিল একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে। একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও দুদক কাজ করেছে ক্ষমতাসীন সরকারের তাঁবেদার হয়ে। যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকার দুদককে তাদের হাতের পুতুল বানায়। আর সে কারণে গণঅভ্যুত্থানের পর দুদকের চেয়ারম্যানসহ দুই কমিশনার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পাশার দান পুরোপুরি উল্টে যায়। যারা এতদিন দুদককে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিল এবার দুদকের তীর তাদের দিকেই তাক করে।
পূর্ববর্তী অপরাধীদের পেছনে ধাওয়া না করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য, প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। কর্মকর্তাদের টেবিলে নতুন অনুসন্ধানের কাগজপত্র জমতে থাকায় পূর্ববর্তী সময়ের কাজে স্থবিরতা নেমে আসে, এবং গত চার মাস ধরে দুদক প্রায় স্থবির দশাতেই আছে। এর মধ্যে, দুদককে আরও স্বচ্ছ, গতিশীল করতে গঠিত হয়েছে সংস্কার কমিশন। দুদকের সংস্কার প্রস্তাব বিবেচনায় রেখেই টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তারা কাজ করছেন।
তিন মাসের মধ্যে তাদের কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়ার কথা। বিশেষজ্ঞরা চাইছিলেন, সংস্কার হওয়ার আগে যেন চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ না হয়। গত ২৯ অক্টোবর সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেল, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান হিসেবে জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে দুজন কমিশনার নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন দুই কমিশনার হতে যাচ্ছেন মিয়া মোহাম্মদ আলী আকবর আজিজি এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ।
এই তিনজন নিয়োগের খবর গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছিল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছিলেন, পুরোনো পদ্ধতিরই অনুসরণ। প্রশ্ন উঠেছে, আগের প্রক্রিয়ায় একই মানদণ্ডে যদি দুদক গঠন করা হয়, তাহলে আবার সংস্কার কমিশন কেন? বর্তমান আইন অনুযায়ী নতুন কমিশনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তারপর কি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী দুদকে নিয়োগ হবে, সেটা কি যুক্তিসংগত ও বাস্তব?
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে ২২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। দুদক আইনের সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রকৃত স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেছে তারা। সংশ্লিষ্ট অন্য অনেকে বলছেন, দুদক সংস্কারের আগে নির্বাচন কমিশন গঠনও প্রশ্নসাপেক্ষ। গত ২০ বছর ধরে দেশে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, তার তদন্ত না করে দুদকের স্বচ্ছতা স্পষ্ট হতে পারে না। দুদকের চেয়ারম্যান নিয়োগপ্রাপ্তি ও সংস্কার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়ে গেলেও আমরা চাই সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা দুর্নীতি দমনে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে