Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

কথা রাখলেন রাব্বিরা, ঘুচালেন আক্ষেপ

Mir Mahbubur Rahman

মীর মাহবুবুর রহমান

মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

যুবাদের এশিয়া কাপের আগমুহূর্তে আহরার আমিনের পরিবর্তে মাহফুজুর রহমান রাব্বিকে অধিনায়কত্ব দেয় বিসিবি। নেতৃত্বের ভার কাঁধে নেওয়ার পরই রাব্বি জানান, এশিয়া কাপ জিততেই দুবাইয়ে পা রাখবে তার দল। তখন বাংলাদেশ দলপতির এই বক্তব্যকে বেশিরভাগ লোকই হয়তো ‘কথার কথা’ ভেবেছিলেন। কারণ, কাগজে-কলমে ‘এশিয়া কাপ’ হলেও এটি আসলে ‘মিনি বিশ্বকাপ’। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো পরাশক্তিদের পাশাপাশি উদীয়মান শক্তি আফগানিস্তানও অংশ নেয় ৮ দলের এই টুর্নামেন্টে। ভারতের মাটিতে বড়দের ওয়ানডে বিশ্বকাপে যে ১০টি দল খেলেছে, এর মধ্যে ৫ দলের প্রতিনিধিরাই অংশ নেয় এশিয়া কাপে। তাই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই আসরে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়াটা মোটেও সহজ কথা নয়। তবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল যে সত্যি সত্যিই ‘চ্যাম্পিয়ন’ হতে দুবাই গিয়েছিল, ট্রফি জিতেই সেটার প্রমাণ দিল রাব্বির দল।

গত রোববার, ১৭ ডিসেম্বর দুবাইয়ে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ট্রফি হাতে নিয়ে দলপতি রাব্বি বলেন, ‘আমরা এখানে চ্যাম্পিয়ন হতে এসেছিলাম, হয়েছি।’ ফাইনালে বাংলাদেশের যুবাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি আরব আমিরাত। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালটা হয়েছে বড্ড একপেশে, জুনিয়র টাইগারদের জয় ১৯৫ রানের ব্যবধানে। রানের হিসাবে এটাই এবারের আসরের সবচেয়ে বড় জয়। শুধু কি ফাইনাল? গোটা আসরেই তো একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছে টাইগার যুবারা। তাদের সামনে যারাই পড়েছে, কাটা পড়েছে। শুরুটা হয়েছিল আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আমিরাতকে ৬১ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর জাপানের বিপক্ষে জয় ৯ উইকেটে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ চারে নাম লেখায় বাংলাদেশ।

সেমিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট দল ভারত। তবে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতে পারেনি আটবারের চ্যাম্পিয়নরাও। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে মারুফ মৃধার বোলিং তোপে ৬১ রানেই ৬ ভারতীয় ব্যাটার প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। পরে মুশির খান (৫০) ও মুরুগান অভিষেকের (৬২) দৃঢ়তায় ১৮৮ রানের সম্মানজনক স্কোর পায় ভারত। তবে এই স্কোরে অদম্য বাংলাদেশকে আটকাতে পারেনি ভারতীয় যুবারা। আরিফুল ইসলামের ৯৪ ও সাবেক অধিনায়ক আহরাম আমিনের ৪৪ রানের ইনিংসে ভর করে ম্যাচটি জিতে ফাইনালে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হতে পারতো আরেক পরাশক্তি পাকিস্তান। তবে সেমিফাইনালে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান শেষ দিকে এসে তরী ডুবিয়ে দেয়, নাটকীয়ভাবে ১১ রানে জিতে ফাইনালে জায়াগা করে নেয় আমিরাত।

বাংলাদেশ যুবাদের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে ফাইনালে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে আরব আমিরাত। বাংলাদেশের করা ২৮২ রানের জবাবে মাত্র ৮৭ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। টাইগার ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলীর (১২৯) সমান রানই করতে পারিনি গোটা আমিরাত দল। শিবলীর কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। গোটা আসরের সেরা ব্যাটার সে, ফাইনালের ম্যাচসেরা। ৫ ম্যাচে ১২৬ গড়ে ৩৭৮ রান করে টুর্নামেন্টেরও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন এই ডানহাতি। সর্বাধিক ৩৪ চারও এসেছে তার ব্যাট থেকে। জাতীয় দলের সৌম্য সরকার আর যুব দলের এই শিবলী যেন একটা বিন্দুতে এসে মিলে গেল। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন সৌম্য সরকার। মাত্র ২ ম্যাচ খেলে সৌম্য করেছিলেন ২৫১। এর মধ্যে কাতারের বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ২০৯ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস।

২০২৩ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শিবলীর গড়ও সৌম্যের সমান (১২৬)। সৌম্যর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে এশিয়া কাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় নাম লেখালেন এই জুনিয়র টাইগার। ট্রফি জেতার পরও পা মাঠিতেই রাখছেন শিবলী। দলকে নিয়ে তার দৃষ্টি আরো বহুদূরে, ‘সামনে বিশ্বকাপ, এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা চেষ্টা করব।’ এবারের এশিয়া কাপের এমন পারফরমেন্স ভুলিয়ে দেবে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের সেই আক্ষেপের স্মৃতিকে। সেদিন কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের হাতছানি ছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সামনে। ফাইনালে ভারতকে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট করেও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি বাংলাদেশের। মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ সেদিন গুটিয়ে গিয়েছিল ১০১ রানে। ৫ রানে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হন আকবর আলী-তাওহিদ হৃদয়-শামীম হোসেনরা।

৪ বছর আগের এশিয়া কাপ হারার আক্ষেপটা এবার ঘুচিয়ে দিল রাব্বি বাহিনী। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তিও রয়েছে টাইগারদের। পুরুষ ক্রিকেট দলের কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা না থাকলেও অনূর্ধ্ব-১৯ ও নারী ক্রিকেট দল আমাদের দিয়ে যাচ্ছে দুহাত ভরে। এশিয়া কাপ জয়ের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার অবশ্য সুযোগ নেই। সামনের মাসেই যুব বিশ্বকাপ। ১৯ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হবে আসরটি। প্রোটিয়াদের মাটিতেই তিন বছর আগে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল যুবারা। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পর আবারও সেই ‘লাকি কান্ট্রি’তে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ