শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। শিক্ষার্থী, অভিাবক, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে এই অভিযোগ প্রায় সবারই। বিদ্যমান এই শিক্ষাব্যবস্থায় দেশে একদিকে যেমন দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না, আরেক দিকে উপযুক্ত ক্ষেত্রে সুযোগ্য গবেষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরও অভাব থেকে যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় বারবারই কারিকুলাম পরিবর্তন হচ্ছে। তাতেও কোনো ফল হচ্ছে না।
দফায় দফায় কারিকুলাম পরিবর্তনে শিক্ষায় কী প্রভাব পড়ছে? তা নিয়ে গণমাধ্যমেও বেশ লেখালেখি হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, কারিকুলাম পরিবর্তনে সুফলের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই পড়ছে বেশি। অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের পাঠ্যপুস্তক ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। অভিভাবকরাও ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারছেন না।
সবচেয়ে উদ্যোগের বিষয়, ট্রেনিং দেয়ার পরও অনেক শিক্ষকই নতুন এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পড়াতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় এক ধরনের অরাজকতা বিরাজমান। জানা গেছে, শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, নতুন এ পদ্ধতি বোঝার জন্য যে প্রশিক্ষণ দরকার তা সঠিকভাবে দেয়া হয়নি।
ফলে পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই আছে অন্ধকারের মধ্যে। অন্যদিকে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে আপত্তি তোলেন অভিভাবকরা। তবে সরকার বলছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে প্রস্তুত করতে এই উদ্যোগ তাদের।
প্রশ্ন হচ্ছে, যে শিক্ষাপদ্ধতি ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক বুঝতে পারছেন না, তা সরকার কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? সরকার বলছে, সময় লাগবে? কত সময়? কত বছর? তাতে কতগুলো প্রজন্মের জীবন শেষ হয়ে যাবে, তা নিয়ে সরকারের কি কোনো মাথাব্যথা আছে?
শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, ‘আমরা মুখস্ত করার প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসে এক দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে এই শিক্ষাক্রম চালু করেছি; কিন্তু এটি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা বেশি আসছে শহুরে বাবা-মায়েদের কাছ থেকে। সবাই এর বিরোধিতা করছে না।’ মুখস্ত নির্ভরতা অবশ্যই কমাতে হবে।
তাতে সবাই একমত; কিন্তু কী উপায়ে তা কমাতে হবে, তা অবশ্যই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের বুঝতে হবে। আর ‘মুখস্ত করার প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে’- এটাও একটা মুখস্ত বুলি হয়ে গেছে। মুখস্ত করা ছাড়া কোনো পড়াশোনাই কি সম্ভব? কোনো কিছু জানতে-বুঝতে হলে অবশ্যই মুখস্ত করতে হবে; কিন্তু মুখস্ত করতে হবে বুঝে। এ কথাটা কিন্তু কেউ বলছেন না।
এতেও বোঝা যায় সরকারও যা করছে, তা যে খুব বুঝে করছে তা না। এই অরাজক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। দেশের সরকার, শিক্ষাবিদ, গবেষক সবাইকে একযোগ হয়ে এই কাজ করতে হবে। শুধু কারিকুলাম পরিবর্তনের নামে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলার অধিকার কারও নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে