উঁচু ভবন নির্মাণে রাজউকের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন
বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এখানে ১ হাজার ১৪০ জন মানুষ বাস করেন। শহর আরও বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। সেখানে রাজধানী ঢাকা শহরের কথা বলাই বাহুল্য। স্থানের অভাবে এখানে দালানকোঠা কেবল আকাশের দিকে উঠছে; কিন্তু উঁচু ভবন নির্মাণ অনেক দিক থেকেই বিপজ্জনক। একে তো অল্প জায়গার মধ্যে উঁচু ভবনগুলো গা ঘেষাঘেষি করে উঠছে, দ্বিতীয় অনেক উঁচু ভবনের সামনের রাস্তাগুলো সরু। এতে যে কোনো সময়ই যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছেও। অগ্নিকাণ্ড এবং দেয়াল ধসে পড়ে অনেক মানুষ মারা গেছেন।
এর মধ্যেই গতকাল (৬ জুলাই) সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল, উঁচু ভবন নির্মাণে ছাড়পত্র নিয়ে জালিয়াতি হচ্ছে এবং এর পেছনে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে রাজউকের বিরুদ্ধেই। খবরটি অত্যন্ত আতঙ্কজনক নিঃসন্দেহে। যে রক্ষক সেই যদি ভক্ষক হয় তার চেয়ে বড় ভয়ংকর খবর আর কিছু হয় না।
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার বাসযোগ্যতা ফেরাতে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুমোদনের পর ভবনের উচ্চতা বাড়াতে পুরোনো নথি ব্যবহার করে ছাড়পত্র নেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনায় রাজউকের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া সাত ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছে রাজউকের নগর-পরিকল্পনা শাখা। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজউকের নগর-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শাখা থেকে রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
রাজউক সূত্র বলছে, ছাড়পত্র জালিয়াতি করে ভবন নির্মাণের চেষ্টা কত ব্যক্তি করছেন, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে এমন জালিয়াতির ঘটনা অনেক। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের জালিয়াতি করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের স্রেফ হাতের তালুতে জীবন নিয়ে বাঁচা ছাড়া কোনো গতন্ত্যর নেই।
নানা প্রয়োজনে মানুষ ঢাকা শহর থাকতে বাধ্য হয়। ঢাকা শহরে তাই আবাসনের চাহিদা প্রচুর। নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে অবৈধভাবে ঢাকা শহরে অনেক বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। অনেক বহুতল ভবন নির্মাণে এমন কি রাজউকের অনুমতিও নেই। অনেক অনুমতিপত্র ভুয়া। এই সুযোগে একদল অসাধু ব্যবসায়ী যাচ্ছেতাইভাবে ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন। সেখানে অফিসসহ নানা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানও চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কে নেবে?
রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর আবাসন-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাজউকের দায়িত্ব। এখন শর্ষের ভেতরেই ভূত থাকলে সেই ভূত ছাড়াবে কোন ওঝা? আমাদের দাবি জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া সাত ব্যক্তিকে শিগগিরই বিচারের আওতায় আনা হোক। উঁচু ভবন নির্মাণে আর যেন কোনো জালিয়াতি ও গাফিলতি না হয় সে ব্যাপারেও রাউজক আরও সচেতন হোক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে