ধ্বংসস্তূপের মাঝেই গাজায় রমজান
ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত হামলার মুখেই রোজা এসেছে গাজায়। পাশাপাশি গাজায় দুর্ভিক্ষ ও রোগভোগ তো লেগেই আছে। মুসলিম বিশ্বের অন্য মুসলমানরা যখন সারাদিন সিয়াম সাধনা পালন করছে, গাজাবাসী তখন সারাদিন ধরে ধ্বংসস্তূপের ভেতর খুঁজছে আপনজনের মৃতদেহ।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় এমনিতেই প্রতিদিন ২৫ জন মারা যায় গাজায়, তারা আর রোজা কী রাখবে?
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, উত্তর গাজার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সেখানে ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্যও পৌঁছুতে পারছে না। পুরো অঞ্চলজুড়েই দুর্ভিক্ষ চলছে। এর মধ্যেই সেখানকার মানুষ রোজা রাখছেন।
গাজার দক্ষিণ সীমান্ত শহর রাফাহ। যেখানে ১৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এমনিতেই যখন খাবারের স্বল্পতা খাবার বাঁচাতে তারা রোজা রাখছেন। সেহরিতে যা কিছু হোক খেয়ে সারাদিন রোজা রেখে তারা ইফতার করে টিনজাত কিছু শুকনো খাবার দিয়ে। মটরশুঁটি জোটে কারও কারও ভাগ্যে। রাফাহার শরণার্থীদের একজন মোহাম্মদ আল-মাসরি। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ‘রোজার জন্য আমাদের কোনো প্রস্তুতি নেই। গৃহহীন মানুষের কী আছে? রমজান আমাদের জন্য কেবল পবিত্র মাস নয়, আনন্দেরও মাস। পরিবারসমেত সেহরি ও ইফতার করি আমরা; কিন্তু এই ঠান্ডার মধ্যে তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছি আমরা। রমজান আমাদের কাছে আগের মাসগুলোরে মতোই।’
৬৩ বছরের জাকি আবু মনসুরও একজন শরণার্থী। তাঁবুর ভেতর বসে তিনি বলছিলেন, ‘রোজা ভাঙার পর ইফতারে কী খাব এখনো জানি না। এই মুহূর্তে আমার কাছে কেবল একটি টমেটো আরেকটি শশা আছে। কিছু কেনার মতো একটা পয়সাও নেই হাতে।’
এর মধ্যেই গাজার আকাশে উড়ছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান। কখন কোথায় বোমা পড়বে কেউ জানে না। রোজার মাস যুদ্ধ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাও যুদ্ধ চলছেই। গত দুদিনের রোজার মধ্যেই ৪০ বার বিমান হামলা হয়েছে গাজায়। তাতে মারা গেছে ৬৭ জন।
রোজা মুসলমানের এক গভীর ধর্মীয় অনুভূতির নাম। এই অনিশ্চিত জীবনের মধ্যেও গাজাবাসী রমজান-উদযাপনের নিজস্ব কিছু উপায় খুঁজে নিয়েছেন। সামান্য গোছগাছ করে তাঁবুর ভেতরটা পবিত্র করে নিয়েছেন। তাঁবুর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ফানুস বিতরণ করেছেন। আগের দিন ইসরায়েলি বিমান হামলায় যে মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে সেখানেই ডজনখানেক মুসল্লি একত্রিত হয়ে তারাবির নামাজ আদায় করছেন।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে