Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ফের রাত দখল, মধ্যরাতে বিচার চেয়ে জনপ্লাবন কলকাতায়

Tanmay Mondal, Kolkata

তন্ময় মণ্ডল, কলকাতা

শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রতিবাদ এখন আন্দোলনে রূপ নিয়েছে কলকাতাসহ সারা পশ্চিমবঙ্গে। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ১৪ আগস্ট মেয়েদের রাত দখল কর্মসূচি, চিকিৎসকদের অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতি থেকে শুরু করে লাগাতার বিক্ষোভ-মিছিল চলছে। উত্তাল সারা ভারতবর্ষ। গোটা দেশ একটা আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছিল ১৪ আগস্টের রাতে। মাঝে কেটে গেছে প্রায় তিনটি সপ্তাহ। ‘তিলোত্তমা’ (প্রতীকী নাম) এখনো বিচার পায়নি। তিলোত্তমার ধর্ষক ও খুনিরা এখনো অধরা। গতকাল আবারও কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রাত দখলের এক অভূতপূর্ব নজির দেখল গোটা দেশ। যাদপপুর, দমদম, গড়িয়া, ব্যারাকপুরসহ কলকাতা সংলগ্ন জায়গার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ বিচার চাইতে পথে নেমেছেন। এই স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক প্রতিবাদ চোখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাইরের রাজ্যেও।

৫ সেপ্টেম্বর আরজি কর কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিন ছিল। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ফের ওঠার কথা৷ স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই আরজি কর কাণ্ডে হস্তক্ষেপ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে সেই শুনানির দিন কিন্তু পিছিয়ে গেল। এর আগের শুনানিতে পুলিশি তদন্ত নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তুলেছিল ভারতের শীর্ষ আদালত৷ এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার ছাত্রসমাজের ডাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় শহর কলকাতা।

১৪ আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নয়, জাতীয় পতাকা হাতে পথে নেমেছিল সাধারণ মানুষ। গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর সেই কর্মসূচিরই পুনরাবৃত্তি হলো। তবে এবার আন্দোলন যেন আরও জোরাল। এদিকে শুনানির তারিখ পিছিয়ে গেছে। ৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদী জনতা প্রশ্ন ছুড়ছেন বিচারব্যবস্থার দিকেও।

গতকাল শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, সুপ্রিম কোর্টের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, গতকাল অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এজলাসে বসবেন না। এ খবরে ভেঙে পড়েছে নিহত চিকিৎসকের পরিবার। অবশ্য আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা বলছেন, সু্প্রিম কোর্টে এই মামলা যত পিছাবে ততই জোরাল হবে আন্দোলন। তারা শেষ দেখে ছাড়বেন। এদিন কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক কুণাল সরকার সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘কোথাও যেন মনে হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট এটাকে একটু ৫টা সাধারণ কন্সটিটিউশনাল ম্যাটার বা একটি জেনারালিটি দিয়ে দেখছেন! তাদের থেকে আরও দৃঢ় হাতে আরও কড়া মনোভাব আশা করা হয়েছিল। আমরা অনেকটা সময় নষ্ট হতে দেখলাম।’

রাত দখলে যোগ দিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনও। নির্যাতিতার কাকার বক্তব্য, ‘২টা ৪০ বা ৩টা ১০ হবে তখন। মেয়েকে দেখে বেরিয়েছি। তার কিছুক্ষণ পর মুখ্যমন্ত্রীর ফোন আসে, কথা বলি। এরপর ডাক্তার বাবুরা আমার দাদা আর বউদিকে একটা ঘরে আটকে রাখে। অন্তত ১৫ জন ডাক্তার ছিলেন। সাদা কাগজ দিয়ে বলেন, ‘আপনি এর ওপর সই করে দিন, যা দরকার আমরা লিখে নেব। আপনি এখন টেনশনে আছেন।’

আমি বললাম, ‘সাদা কাগজে সই করাচ্ছেন কেন’? আমাদের বাড়ি থেকে ১৮ জন লোক ছিল। তাদের কাউকে তো ডাকতে পারত! ডাকেনি। আমি সাদা কাগজটা ছিঁড়ে ফেলি। তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই প্রতিবাদের স্বর জোরাল হচ্ছে না। মানুষ পথে নামছেন। সদর্পে বিচার চাইছেন। গতকালের রাত দখলে জনপ্লাবন জানান দিচ্ছে বিচার দ্রুত না হলে আরও তীব্র দানা বাঁধবে আন্দোলনের ঝড়।

অন্যদিকে রাত দখলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলা কোচবিহারের মাথাভাঙাসহ কয়েকটি জায়গায় শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে আরও ক্ষিপ্ত হচ্ছে জনতা। এখন শুধু এই মামলার শুনানির দিকেই তাকিয়ে আছে কলকাতাসহ গোটা ভারতবর্ষ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ