Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে: বিজিবি ডিজি

Senior  reporter

সিনিয়র রিপোর্টার

শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) পাঁচ দিনের সীমান্ত সম্মেলন আজ শনিবার শেষ হয়েছে। সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

সীমান্ত সম্মেলন শেষে শনিবার (৯ মার্চ) উভয়পক্ষ এক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। বিবৃতিতে তারা উভয়পক্ষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও যৌথ প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে উভয় বাহিনী ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)’ কার্যকর বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।

এ ব্যাপারে বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫ দিনের সীমান্ত সম্মেলন শনিবার শেষ হয়েছে। বিএসএফ মহাপরিচালক নিতিন আগ্রাওয়ালের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ নয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিসহ ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এটিকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান।

সম্মেলনে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো হলো-২০২২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতির চেতনাকে সমুন্নত রেখে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা, আহত, মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অধিক সতর্কতামূলক ও কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তে যৌথ টহল পরিচালনা জোরদার করার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মসূচি জোরদারকরণ এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

পারস্পরিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে যৌথ নদী কমিশন অনুমোদিত সীমান্তের অভিন্ন নদী সমূহের বন্ধ থাকা তীর সংরক্ষণ কাজ পুনরায় শুরু করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

উভয় দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আইসিপি, এলসিপি, এলসিএস সমূহের দ্রুত নির্মাণ কাজে সহায়তা করতে এবং বর্ডার হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ।

বিজিবি মহাপরিচালক ‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় তিন বিঘা করিডোর হয়ে দহগ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে বিএসএফ মহাপরিচালককে অনুরোধ জানান। বিএসএফ মহাপরিচালক এ ব্যাপারে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।

সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিজ নিজ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়টি তুলে ধরে উভয় পক্ষই এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, সুনির্দিষ্ট তথ্য আদান-প্রদান ও নিজ নিজ সীমান্তে প্রয়োজনীয় আভিযানিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছান।

সীমান্তবর্তী খাল হয়ে ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়ায় ভেসে আসা শিল্পবর্জ্য মিশ্রিত পানির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের ওপর জোর দেন। উভয় পক্ষ যৌথ জরিপ পরিচালনা এবং সীমান্তবর্তী পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।

এ ছাড়াও বিজিবি মহাপরিচালক জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী পাঁচ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য ফসলি জমির সেচ সুবিধা ও সীমান্তবর্তী জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মানবিক দিক বিবেচনায় অবিলম্বে কুশিয়ারা নদীর সাথে বন্ধ থাকা রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএসএফ মহাপরিচালক উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত রহিমপুর খালের মুখ পুনরায় উন্মুক্তকরণের আশ্বাস দেন।

উভয় মহাপরিচালক সম্মেলনের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা উভয়ই সীমান্তে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ