শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমান
দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এখন মোবাইল আসক্তির দৃশ্য দেখা যায়। যেসব পরিবারে ছোট শিশু আছে, সময়ে-অসময়ে তারা মোবাইল নিয়ে বসে আছে। হয় কার্টুন দেখছে, না হয় কোনো ভিডিও দেখছে, না হয় ভিডিও গেমস খেলছে। শিশু কথা বলতে শেখার আগেই বাবা-মা শিশুর হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিচ্ছেন। একটু বড় হয়ে শিশু যখন মোবাইলে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যায়, তখন বাবা-মা আবার শিশুর দোষই দেয়; কিন্তু জন্মের পর ওই শিশুটিকে মোবাইল হাতে পেল কী করে, সেই প্রশ্নটি ভেবে দেখে না।
শিশুর কান্না থামাতে বা শিশুকে ব্যস্ত রাখতে মা-বাবাই শিশুর হাতে মোবাইল তুলে দেন। এমন অনেক দেখা গেছে, বাবা-মা হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত, শিশু যেন তাদের জ্বালাতন না করেন, তাই তাদের থামাতে অব্যর্থ অস্ত্র মোবাইল হাতে তুলে দেয়া। তাতে হয়তো শিশু সাময়িক শান্ত থাকে; কিন্তু এতে শিশুর কী অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা কি বাবা-মা ভেবে দেখেছেন?
বিষয়টি এখন আর পারিবারিক-সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলে হবে না, জাতীয় সমস্যা হিসেবেই দেখতে হবে। এতে করে পরবর্তী কয়েকটি প্রজন্ম ধ্বংস হবে তা ভেবে দেখতে হবে। এ-বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন লিখেছেন, যেসব শিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন- খেলাধুলা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তারাই ক্রমাগত মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ এবং বাস্তবজীবনে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া চোখেরও ক্ষতি হয়।
মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট গেম আসক্তি অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের আসক্তির মতোই। একটা আচরণগত আসক্তি, অন্যটা রাসায়নিক আসক্তি। বাস্তবে এমন অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেসব শিশু ছোটবেলা থেকে মোবাইলে আসক্ত হয়, তাদের সামাজিক যোগাযোগে তেমন আগ্রহ থাকে না। অনেক বিষয়েই তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। অল্পতেই রেগে যায়। খিটমিটে মেজাজের হয়ে পড়ে।
ছোট বাচ্চা খেতে চায় না বলে অনেক মা এমনকি মোবাইল হাতে ধরিয়ে দিয়ে খাওয়ায়। বাচ্চা মোবাইলে ডুবে থাকে, আর মা মুখে খাবার ভরে দেয়। খাবার গ্রহণের প্রতি শিশুর কোনো মনোযোগই থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার গ্রহণের সময় খাবারের দিকে মন না থাকলে খাওয়া-খাদ্যও ঠিক মতো হজম হয় না। ফলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ঘন ঘন অসুস্থ হয়।
গ্রামের শিশুরা এখনো প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলার সুযোগ পায় বলে তারা মোবাইল কমই ব্যবহার করে; কিন্তু শহরের শিশুরা বেশির ভাগ সময় ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকে বলে তাদের মোবাইল আসক্তি বেশি। শহরাঞ্চলে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই, পার্ক নেই। মোবাইল আসক্তির জন্য কোনো শিশুকে দোষ দেয়া যাবে না। এই দোষ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার। শিশুদের সুন্দর সুস্থ শৈশব নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য পরিবারের যেমন দায়িত্ব আছে, দায়িত্ব আছে রাষ্ট্রের। শিশুদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিতে হবে। সেরকম পরিবেশ দিতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে