দারিদ্র্যের হার কমান, খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ান
ঢাকার কারওয়ানবাজার এলাকায় একটু ঘুরলেই বোঝা যায় দেশে সম্প্রতি দারিদ্র্যের হার এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কতখানি বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি বিক্রেতারা সেসব শাকসবজি নিয়ে আসেন কারওয়ানবাজারে, সেসব কুড়িয়ে বা কিছুটা নষ্ট হয়ে গেলে কিছুটা কম দামে কিনে অনেকেই সারি সারি সাজিয়ে বিক্রি করেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় বাড়ছে। ভিড় বাড়ছে টিসিবির ট্রাকের পেছনেও। টিসিবির ট্রাকের সারিতে এক সময় শুধু নিম্নআয়ের মানুষই দাঁড়াতেন, পোশাক দেখেই বোঝা যায় এখন অনেক মধ্যবিত্তরাও দাঁড়ান। আগে নাকি মধ্যবিত্তদের অনেকের টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য ক্রয় করতে লজ্জা লাগত, এখন নাকি আর লজ্জা লাাগে না। যেখানে পরিবার চলে না, সেখানে লজ্জা পেয়ে আর কী হবে!
দেশে যে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার চিত্র বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে। গত সোমবার (২৪ মার্চ) বিআইডিএসের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় জরিপটি পরিচালিত হয়। ঢাকা, বান্দরবান, খুলনা, রংপুর ও সিলেট জেলা জরিপের জন্য নির্ধারণ করা হয়। মোট ৩ হাজার ১৫০টি খানা বা পরিবারের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে শহরের খানা ১ হাজার ৯৯০টি এবং গ্রামীণ খানা ১ হাজার ১১৬টি। সবচেয়ে বেশি ৭৫০টি খানা ঢাকার। উক্ত জরিপে জানা যায়, ২০২২ সালে গ্রামে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিবিএসের জরিপে শহরে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বিআইডিএসের জরিপে এসেছে ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগেই এই হার বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ২০২২ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগত ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
দুই বছরে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়া আতঙ্কজনক। এ জরিপ ২০২৪ সালের, গত পাঁচ-ছয় মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেশের অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ বন্ধ। উৎপাদন ও আমদানি অনেক কমে গেছে। ভরা মৌসুমেও এবার চালের দর বাড়তি দেখা গেছে। শীতে শাকসবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও শীত শেষেই যে দাম বাড়বে আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
বিআইডিএসের ধারণা জরিপে দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হার হয়েছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূস জানান, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত অর্থনৈতিক চাপ এবং মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ হতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই নীতি গ্রহণ করা জরুরি। আমরা জানি দারিদ্র্য বাড়লে সমাজে-রাষ্ট্রে নানা ধরনের অপরাধও বৃদ্ধি পায়। জরিপের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকারকে এখনই খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোসহ দারিদ্র্য হার কমানোর বিষয়ে এখনই সোচ্চার হতে হবে। আর এ জন্য বেকারত্বের হার কমানো ও আয়বৈষম্য কমানো ছাড়া গতি নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে