Views Bangladesh Logo

চালের দাম কমান

মজান মাসেও বেশিরভাগ পণ্যের দাম নিম্নমুখী বলে অনেকেই বর্তমান সরকারের প্রশংসা করেছেন। সবজি ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম কম থাকলেও চালের মূল্য বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই থেকে চার টাকা। তাও হয়তো ধর্তব্যের মধ্যে থাকত না যদি চালের মূল্য আগেই না বাড়ত। গতকাল শনিবার (১৫ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এক বছরে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৭ টাকা। যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তিনবেলা ভাত খায়, সেখানে কেজিপ্রতি ১৭ টাকা চালের মূল্য বেড়ে যাওয়া খরচের খাতায় বাড়তি যোগসংখ্যা বটেই। নিম্নআয়ের অনেক পরিবারের জন্য এটাই বহন করা কঠিন।


প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছর রমজানে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে সরু চালের কেজি ছিল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮১ টাকা। কেজিতে বেড়েছে অন্তত ১৭ টাকা। একইভাবে বেড়েছে মাঝারি ও মোটা চালের দাম। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও মোটা ও মাঝারি মাপের চাল ক্রয় শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল সরকারি চুক্তির আওতায় পাকিস্তান থেকে আমদানি করা ২৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি মরিয়ম নামে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভারত থেকেও চোরাপথে চাল আসছে, সেই চাল জব্দও করা হচ্ছে। তাও চালের দাম কমছে না কেন?


জানা গেছে, এর কারণ চালের মোকাম দীর্ঘদিন ধরেই সিন্ডিকেটের কব্জায়। কোনোভাবেই এই সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। পাশাপাশি সরকারি গুদামে চালের মজুত ক্রমেই কমে যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকারি গুদামে যে চাল মজুত থাকার কথা তারচেয়ে অনেক কম আছে। এ কারণেই সরকার স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে সাশ্রয়ী দামে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য দিলেও চাল দিচ্ছে না। যার কারণেও দেখা গেছে এবার ভরামৌসুমেও চালের দাম কমেনি, বরং কেজিপ্রতি দু-চার টাকা বেড়েছে গত মাসেও। অথচ বছরের শুরুতেই উপদেষ্টারা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন, চালের দাম আর বাড়বে না; কিন্তু বিশ্ববাজারে চালের দাম যখন কমতির দিকে তখন দেশের বাজার কেন ঊর্ধ্বমুখী- এই প্রশ্নের জবাব নেই।

সরকার একদিকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি বন্ধ করছে অন্যদিকে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে চাল দিচ্ছে না। এ অবস্থায় চালের দাম স্থিতিশীল রাখা অসম্ভব বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। উপদেষ্টার ভাষ্য মতে বাজারে তো চালের এখনো প্রচুর সরবরাহ আছে; কিন্তু সেই চাল কেনার সামর্থ্য কি সবার আছে?


দু-চার টাকা দাম বেড়ে যাওয়া হয়তো অনেকের কাছে কিছু নয়; কিন্তু গরিব মানুষের কাছে তাই অনেক। কেজিপ্রতি দু-চার টাকা বেড়ে গেলে অনেক পরিবারের চালের পেছনে দৈনিক ব্যয় বেড়ে যায় বিশ-বাইশ টাকা, মাসে তা প্রায় পাঁচশ টাকার মতো। সবার কি মাসে পাঁচশ টাকা আয় বাড়ছে?


এবার ভরা মৌসুমেই চালের দাম নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হলো তাতে আগামী দিনগুলো নিয়ে অনেকেই সংকিত। তা ছাড়া শীতের মৌসুমে এমনিতেই শাক-সবজির দাম কম থাকে। শীত চলে গেলেই শাক-সবজির দাম বাড়বে। চালের দামেও তা প্রভাব ফেলবে। তাই বিষয়টি সুবিবেচনায় নিয়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখনই আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। চালের দাম না কমালে অনেক নিম্নআয়ের মানুষের জীবনেই দুর্বিষহ প্রভাব পড়বে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ