নতুন মুদ্রানীতি
মূল্যস্ফীতি কমানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ
চলমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করারও ঘোষণা দিয়েছে। ফলস্বরূপ ব্যাংকঋণের সুদের হারের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে, সেটা অনেকাংশে শ্লথ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব পদক্ষেপ নিয়েছে এমন একসময়ে, যখন বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই চলমান মূল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে? দ্রব্যমূল্য কি বাড়তেই থাকবে? ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি যখন ৯ শতাংশের ওপরে ওঠে, তখন সেটি নেমে আসতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ, যা খুবই দুঃখজনক। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে আরও বেশি ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। সাধারণত টাকার সরবরাহ বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে টাকার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক; কিন্তু এখন থেকে এ রকম মুদ্রা সরবরাহ নীতির বদলে সুদহারভিত্তিক নীতি নেয়া হবে। অর্থাৎ সুদের হার বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে মুদ্রার জোগান নিয়ন্ত্রণ করা হবে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুনে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংক ও প্রচলিত ধারার কয়েকটি ব্যাংককে ধার দেয়।
এতে জুনে রিজার্ভ মানির (ছাপানো টাকা) প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, আগামী ডিসেম্বরে তা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও গত জুন পর্যন্ত রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ঋণাত্মক ১ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কয়েকটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির জন্য বাধা।
এই চ্যালেঞ্জগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পক্ষ থেকে এসেছে, যা নীতিনির্ধারকদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে, ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ হলো একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেয়া। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মুদ্রানীতিটি প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি।
রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এ দেশে আরেকটি সমস্যা। নতুন বাজেটে (২০২৪-২৫) রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি করা হয়েছে। রাজস্বনীতি হয়েছে সম্প্রসারণমূলক আর মুদ্রানীতিকে করা হয়েছে সংকোচনমূলক। অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই নীতি একইমুখী হওয়া উচিত ছিল। সেইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমানোর বড় চ্যালেঞ্জ তো আছেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে