Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়করণ এবং বিবিধ প্রসঙ্গ

M A  Khaleque

এম এ খালেক

মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

কটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। কোনো এক অঞ্চলে অত্যন্ত প্রতাপশালী একজন জমিদার ছিলেন। জমিদারের আওতাধীন এলাকায় তার কথাই চূড়ান্ত। জমিদারের ওপর দিয়ে কেউ কোনো কথা বলত না। জমিদারের স্বভাব ছিল তার এলাকায় কোনো গরিব মানুষের সন্তান শিক্ষিত হোক, ভালো করুক, এটা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। একদিন এক গোমস্তা জমিদারের সামনে এসে করজোড়ে বললেন, হুজুর আমার ছেলে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। শুনে জমিদার বললেন, তোর ছেলে স্কুলে ভর্তি হতে পারলেও পাশ করতে পারবে না। এক সময় ঠিকই গোমস্তার ছেলে ক্লাস ফাইভে ভালো রেজাল্ট করে হাই স্কুলে ভর্তি হলো।

গোমস্তা জমিদারকে এই খুশির সংবাদ জানালে জমিদার বললেন, হাই স্কুলে ভর্তি হলে কি হবে ম্যাট্রিক পাস করতে পারবে না। এক সময় ছেলেটি ম্যাট্রিক ও ইন্টামিডিয়েট পাস করে এবং একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে। এক সময় যথারীতি ছেলেটি ভালো একটি চাকরি পায়। এই শুভ সংবাদ জমিদারকে জানাতে গেলে জমিদার বলেন, তোর ছেলে চাকরি পেলেও বেতন পাবে না। এক সময় ছেলেটি চাকরিতে বেতন-ভাতা ঠিকই পেতে থাকল। এ খবর শুনে জমিদার আর কোনো মন্তব্য করলেন না। গল্পটি এখানেই শেষ।

কিছু লোক আছেন, যারা অন্যের ভালো দেখতে পারেন না। তারাও জমিদারের মতোই আচরণ করে থাকেন। গল্পটি মনে পড়ল আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষের নেতিবাচক মনোভাবের কথা স্মরণ করে। বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের জন্য আবেদন করে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে সংস্থাটি গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ মঞ্জুর করে। সিদ্ধান্ত হয় আইএমএফ মোট ৭ কিস্তিতে এই ঋণের অর্থ বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড়করণ করবে।

ঋণ অনুমোদন হবার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রথম কিস্তির অর্থ বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড়করণ করে। প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশ সংস্থাটির কাছে থেকে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ পায়। সেই সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, বাংলাদেশ যেভাবে চেয়েছে, আইএমএফ ঠিক সেভাবেই ঋণ অনুমোদন করেছে; কিন্তু তার এই বক্তব্য মোটেও ঠিক ছিল না। কারণ আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণদানের ক্ষেত্রে ৩৮টি শর্ত দেয়। বাংলাদেশ সেই সব শর্ত পরিপালনের ব্যাপারে সম্মত হয়েই ঋণ পেয়েছে। বাংলাদেশ নিশ্চয় শর্তযুক্ত ঋণ চায়নি। কাজেই বাংলাদেশ যেভাবে চেয়েছে, আইএমএফ ঠিক সেভাবেই ঋণ দিয়েছে এটা মোটেও সত্যি নয়।

আইএমএফের উল্লেখযোগ্য শর্ত ছিল ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, রাজস্ব আয় বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভেও হিসাবায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে নিট ভিত্তিতে রিজার্ভ ক্যালকুলেট করা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে যে অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে এবং এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে ঋণ দিয়েছে সেগুলোকেও রিজার্ভ হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। আইএমএকফের বক্তব্য হচ্ছে, যে অর্থ আমার হাতে নেই এবং ইচ্ছে করলেই তাৎক্ষণিক নোটিশে ব্যবহার করা যাবে না সেটা কোনোভাবেই রিজার্ভ অর্থ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। বাংলাদেশ এসব শর্ত মেনে নেয়ার অঙ্গিকার করার পরই ঋণের অনুমোদন পেয়েছে।

আইএমএফের নিকট থেকে সরকার এমন সময় ঋণের আবেদন করে যখন দেশের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছিল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নামে ব্যাপক হারে অর্থ পাচার হচ্ছিল। সেই সময় যে কোনো মূল্যেই হোক আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশের জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল। এখন প্রশ্ন হলো, গত এক দশকে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি; কিন্তু হঠাৎ করে কোনো এই ঋণ গ্রহণের আবশ্যকতা দেখা দিলো? আইএমএফের ঋণ ছাড়া কি কোনো গত্যন্তর ছিল না? আইএমএফ যেভাবে ৭ কিস্তিতে ঋণের ছাড় করবে তাতে ঋণের পুরো অর্থ পেতে বাংলাদেশকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের একটি উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে।

তিনি একবার প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, আইএমএফের ঋণ হচ্ছে চরিত্রগত সার্টিফিকেটের মতো। অর্থাৎ আইএমএফ যদি কোনো দেশকে ঋণদানে সম্মত হয় তাহলে অপরাপর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেই দেশকে ঋণদানের ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা করে না। কাজেই আইএমএফের ঋণ শুধু ঋণ নয়। এটা অন্যান্য সংস্থার জন্য আস্থার প্রতীকও বটে। আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন পাবার পর কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ শুরুতে উল্লেখিত জমিদারের মতো বলে আসছিলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদন করলেও সেই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড়করণ করা হবে না। কারণ বাংলাদেশ আইএমএফের দেয়া শর্তাদি পরিপালন করতে পারবে না।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এক সময় আইএমএফ এ চাকরি করেছেন এমন বাংলাদেশি দু-এক জন অর্থনীতিবিদ অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশ আইএমএফের অনুমোদিত ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় পেলেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাবে না। সেই সংশয়বাদিদের আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করে বাংলাদেশ আইএমএফ অনুমোদিত ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় পেয়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরে অবস্থিত ইন্টান্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এর নির্বাহী কমিটির সভায় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশকে প্রদত্ত ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়করণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদিত হবার পর পরই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়করণের ফলে সকল জল্পনা কল্পনার সমাপ্তি ঘটলো। উল্লেখ্য,বাংলাদেশের এক শ্রেণির অর্থনীতিবিদ কিছুদিন ধরেই প্রচারণা চালাচ্ছিলেন যে,বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অন্যান্য ইস্যু বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকটের কারণে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নাও করতে পারে। তারা আরও কিছু কারণ প্রদর্শন করছিলেন। উল্লেখ্য, আইএমএফ বিভিন্ন দেশকে যে ঋণ প্রদান করে তার সঙ্গে কিছু শর্ত দেয়া হয়। অন্যভাবে বললে বলতে হয় আইএমএফের প্রতিটি ঋণই শর্তযুক্ত। তারা শর্তহীন কোনো ঋণদান করে না। এসব শর্ত সঠিকভাবে পরিপালন না করলে তারা কোনো দেশকে ঋণ প্রদান করলেও ঋণের অর্থ ছাড়করণ করে না। বাংলাদেশ আইএমএফের দেয়া শর্তাদি কতটা মানছে বা মানার জন্য সচেষ্ট রয়েছে তার ওপর নির্ভর করছিল আইএমএফের পরবর্তী কিস্তি পাওয়া যাবে কি না।

আইএমএফ ঋণ পাবার জন্য যেসব শর্ত বাংলাদেশ তার অনেকই পরিপালন করতে পারেনি; কিন্তু পরিপালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার সচেষ্ট রয়েছে। তাই আইএমএফ বাংলাদেশের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে আইএমএফের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাহুল আনন্দেও নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে তাদের শর্ত পরিপালনের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। প্রতিনিধি দল দেখতে পায়, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই তাদের দেয়া শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ যে শর্ত পরিপালনে আন্তরিক এ ব্যাপারে তারা আস্থাশীল হন।

বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের দেয়া যেসব শর্ত পরিপালন করতে পারেনি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হচ্ছে,ব্যাংক ঋণের সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিয়ে বাজার ভিত্তিক করা। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের আপার ক্যাপ অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ হার তুলে দিলেও এখনো ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজার ভিত্তি করা হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হতার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। ব্যাংকিং আইন সংশোধন করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা অনেকটা ‘যেই লাউ সেই কদু’ অবস্থাতেই রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে একই পরিবার থেকে ২ জন সদস্য নিয়োগের বিধান ছিল। কযেক বছর আগে এই আইন সংশোধন কওে একই পরিবার থেকে ৪জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। সংশোধিত নতুন আইনে একই পরিবার থেকে ৩ জন পরিচালন নিয়োগের বিধান করা হয়েছে।

আগে কোনো ঋণ হিসাব অবলোপন করতে হলে মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের এবং শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের পর সেই ঋণ হিসাব অবলোপন করা যেতো। এখন কোনো ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হরার পর তিন বছর অতিক্রান্ত হলেই তা অবলোপন করা যাচ্ছে। এজন্য শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান রহিত করা হয়েছে। ঋণ ঋণের পরিমাণ যদি ৫ লাখ টাকার কম হয় তাহলে সেই উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে কোনো উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরের প্রয়োজন নেই। কয়েক বছর আগে ২ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ দেয়া হয়। খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় না করে পুনঃতপশিলীকরণের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিছু দিন আগে জনতা ব্যাংক থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি উদ্যোক্তা গোষ্ঠী তাদেও ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতপশিলীকরণ করে নিয়েছে। বর্তমানে যেভাবে ঋণের কিস্তি আদায় না করেই বিভিন্ন কৌশলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তাকে ‘কার্পেটের নিচে ময়লা রেখে ঘর পরিস্কার দেখনোর অপচেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেন। আইএমএফের একটি বিশেষ শর্ত ছিল ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধি করা। এ জন্য রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলা হয়েছিল; কিন্তু এই প্রচেষ্টার কোনো লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে না। রাজস্ব আদায়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মনে হয় না।

জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমন্বয়ের কথা বলা হলেও এটা করা হয়নি। রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আইএমএফের শর্ত মানা সম্ভব হয়নি। যেমন প্রতিষ্ঠানটি গত জুন মাসে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি মার্কিন ডলার সংরক্ষণের শর্ত দিয়েছিল; কিন্তু সেই সময় বাস্তবে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৭ কোটি মার্কিন ডলার। আইএমএফের শর্ত পরিপালনে দুর্বলতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের উদ্যোগের ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই তারা বাংলাদেশের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ ৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ছাড়করণের ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানায়নি। আগামীতে বাংলাদেশের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত ঋণের অবশিষ্ট কিস্তিগুলোও ঠিক মতোই ছাড় করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

অনেকেই এমন প্রচারও চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের ঋণ নিয়ে রিজার্ভেও স্ফীতি বাড়ানোর চেষ্টা করবে; কিন্তু এটা মোটেও ঠিক নয়। কারণ আইএমএফ যেভাবে ঋণের কিস্তি ছাড় করছে, তা রিজার্ভের স্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবদান রাখবে না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যেভাবে অর্থ ব্যয় হচ্ছে আইএমএফের কিস্তি দিয়ে তা পূরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে রিজার্ভেও স্ফীতি বাড়াতে হলে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা বন্ধ করতে হবে। রপ্তানিকারকদের অনেকেই পণ্য রপ্তানি কওে প্রাপ্ত অর্থ ঠিক মতো দেশে আনছেন না।

অন্তত ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে রয়ে গেছে বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। এই অর্থ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। পণ্য আমদানির নামে কেউ যাতে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে, আমদানি নিয়ন্ত্রণের নামে যাতে শিল্পের কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি বিঘ্নিত না হয়। আগামী মার্চ মাসে আইএমএফের আরও একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে তাদের দেয়া শর্তাদি পর্যালোচনার জন্য। আইএমএফ বাংলাদেশ সরকারকে যে সব শর্ত দিয়েছে তার সবই কিন্তু খারাপ নয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ শর্তই আমাদের তাগিদেই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ