ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে খুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ মানুষ, ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জলোচ্ছ্বাসের ফলে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ও খুলনা জেলার নিচু অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে জেলার চার লাখ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। এ ছাড়াও ৫০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, গাছপালা উপড়ে পড়ে গেছে, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম জানান, রিমলের কারণে খুলনা জেলার নয়টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের অন্তত চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসের ফলে শত শতাধিক চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে, প্রচুর পরিমাণে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং দাঁড়িয়ে থাকা ফসলের ক্ষতি হয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড়ে গাছ, বৈদ্যুতিক ও টেলিফোনের খুঁটি উপড়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে অনেক গ্রামও তলিয়ে গেছে।’
তবে আবদুল করিম বলেন, আগে থেকে জেলা প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ায় 'বড় ধরনের দুর্যোগের আশঙ্কা' অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় উপড়ে পড়া গাছের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় কয়েকজন আহত হওয়ায় খবর পেলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আবদুল করিম বলেন, এ পর্যন্ত কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল, নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম জোনের ডিএফও আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডব্লিউডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে প্রায় ৬১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডব্লিউডিবির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী লিয়াকত আলী নিশ্চিত করেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারি বর্ষণ ও বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে নোনা পানি প্রবেশ করায় খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কয়রার ইউএনও তারিক উজ্জামান ও কয়রার বেদকাশীর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নোনা পানি প্রবেশ বন্ধ করতে গ্রামবাসী স্বেচ্ছায় বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছে।
এ ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন জানান, রিমল আঘাত হানার আগেই ২ লাখের বেশি লোককে সফলভাবে সরিয়ে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ বিভিন্ন সংস্থার সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে ১৬৮টি মেডিকেল টিমের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) আরও ১১০০ স্বেচ্ছাসেবক ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত উপজেলাগুলিতে কাজ করছে।
জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিমের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষকে পুনর্বাসনে কাজ করছে খুলনা জেলা প্রশাসন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, মোংলা পশ্চিম জোনের বাংলাদেশ কোস্টগার্ড (বিসিজি), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ মখরুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ায় কোনো ক্ষতি হয়নি।
অন্যদিকে সূত্র জানায়, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপকূলীয় বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে