আমদানি নির্ভরতা কমাতে বন্ধ চিনিকল চালু করুন
বাঙালি জীবনে যে কোনো সুখবর বরণ করা হয় মিষ্টিমুখ দিয়ে। মিষ্টির যখন এতই কদর, তখন ডাক্তাররা বলেন দুনিয়াতে যত মানুষ মারা যায় যুদ্ধে, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় চিনি খেয়ে। অর্থাৎ অতিরিক্ত মিষ্টান্ন খাবার খেয়ে সুগার বাড়িয়ে, ফ্যাট বাড়িয়ে নানারকম অসুখ-বিসুখ বাধিয়ে। তাই বয়স বেড়ে গেলে, ওজন বেড়ে গেলে চিকিৎসাবিদরা অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে নিষেধ করে। তাও যে মিষ্টি ও চিনি থেকে আমাদের দূরে রাখা যায় তাও না।
চিনিবিহীন জীবন অনেকের কাছেই বিস্বাদ। তাই তো দেখা যায় রোজা এলে, ঈদ এলে বা বিশেষ দিবস উপলক্ষে বাজারে চিনির দাম বেড়ে যায়। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে চিনির বাজার অস্থিতিশীল করেছে বিশেষ সিন্ডেকেট। এর সঙ্গে কয়েকটি চিনিকল বন্ধ হওয়ার কারণে চিনিবাজার অনেকখানি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে।
গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বন্ধ হওয়া ৬টি চিনিকল চালুর চেষ্টা করছে সরকার। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে সরকারি মোট ১৫টি চিনিকল রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টির কার্যক্রম বন্ধ আছে। এগুলো হচ্ছে কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকল। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বন্ধ থাকা চিনিকলগুলোর বেশির ভাগই বর্তমানে উৎপাদনের উপযোগী অবস্থায় নেই।
আর দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় চিনিকল-সংশ্লিষ্ট এলাকায় আখের উৎপাদনও কমেছে। শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসএফআইসি সূত্র জানায়, বন্ধ থাকা কারখানাগুলো চালুর আগে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি, কারখানা সংস্কার ও নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা আবশ্যক। এ জন্য কয়েকশ কোটি টাকা লাগবে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই প্রাথমিকভাবে শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জের মধ্যে যে কোনো একটি চিনিকল চালুর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে বিএসএফআইসি।
এতে সব মিলিয়ে ৩৫ কোটি টাকার মতো লাগতে পারে। চিনিকলের ওপর নির্ভর করে অসংখ্য শ্রমিক। এগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিলেন। পাশাপাশি চিনিকলগুলোর ওপর নির্ভর ছিল আখ উৎপাদনকারী কৃষকরা। আখ উৎপাদন না করে আখচাষি কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশে গত এক দশকে চিনির দাম দেড়শ গুণ বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি আখের দাম। এ কারণে অনেক আখচাষি বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন আখের উৎপাদন কমছে।
আখের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকার কারণেই মূলত ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে নতুন করে চিনিকল চালু করতে হলে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি করা আবশ্যক বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর সঙ্গে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ায় দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সুযোগ নিয়েছে নানা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র।
এখন চিনিকলগুলো চালু হলে আখ উৎপাদনও বাড়বে। কৃষক লাভবান হবে। তা ছাড়া আমাদের দেশীয় চিনি, বিশেষ করে লালচিনি কেমিক্যালমুক্ত হিসেবে খ্যাত। তাই চেষ্টা নয়, আমরা চাই যেভাবেই হোক চিনিকলগুলো চালু করা হোক। এর সঙ্গে চিনিকলের যন্ত্রপাতিরও আধুনিকায়ন করতে হবে। চিনিশিল্পে বাংলাদেশ স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ হোক- এটাই প্রত্যাশা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে