ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ মেরামত করুন, জীবন বাঁচান
বাংলাদেশের কিছু ব্রিজ যেন নদী-খাল পারাপারের সেতু নয়, পরপারে নিয়ে যাবার মৃত্যুকূপ। এই যেমন বরগুনার আমতলীতে যে ঘটনাটা ঘটল তা সারা দেশের মানুষকে একেবারে স্তব্ধ করে দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২২ জুন) বরগুনার আমতলীতে বরযাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস সেতু ভেঙে খালে পড়ে ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহত সবাই নারী ও শিশু।
দুপুর ২টার দিকে হলদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু। গণমাধ্যমে এ খবর দেখে সারা দেশের মানুষ অত্যন্ত মর্মাহত। সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই লোহার সেতুটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিএনপি ও জোট সরকারের আমলে নির্মিত হয়েছিল।
যেখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়, সেখানে একসময় বাঁশের সাঁকো ছিল। পরে ওই এলাকার দুর্ভোগ কমানোয় হাঁটার জন্য সেতু নির্মাণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই সেতুটি মূলত মানুষের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়। প্রায় বিশ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টানানো ছিল।
সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান উপজেলার প্রকৌশলী। প্রশ্ন হচ্ছে, সতর্কতা নোটিশ অমান্য করে চালক কেন গাড়িটি ব্রিজে তুললেন? যাত্রীরা কেন নিষেধ করলেন না? গাড়িটি ব্রিজে তোলার আগে তারা কেন গাড়ি থেকে নেমে গেলেন না? এই অসাবধানতার ক্ষতিপূরণ তাদের দিতে হলো জীবন দিয়ে। প্রশাসনও কেন এমন আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করল না, যাতে কেউ নোটিশ অমান্য করতে না পারে?
এখন কে কাকে দোষ দেবে? ১০টি জীবন চলে গেছে। পরিবারের কাছে এ ক্ষতি অপূরণীয়। বিয়ের আনন্দ পরিণত হয়েছে শোকস্তব্ধতায়। বাংলাদেশে এমন অসংখ্য ব্রিজ আছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এরকম অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ মহাসড়কেও চোখে পড়ে। সামনে একটা নোটিশ লাগানো থাকে- ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ, ব্যস, এতটুকুতেই সারা। জীবন হাতে নিয়ে মানুষকে ওসব ব্রিজ পার হতে হয়।
আমাদের দেশের মানুষ এমনিতেই খুব বেশি সচেতন নয়। রাস্তাঘাটে বের হলে তারা অনেকটা চালকের হাতেই জীবন সঁপে দিয়ে বসে থাকে। চালকরাও এসব বিষয়ে সচেতন নয়। প্রশাসনকেও তেমন সচেতন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। ফলে এরকম দুর্ঘটনায় সড়কে প্রাণ ঝরছেই অবিরাম।
এমন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে গণমানুষকেও যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি প্রশাসনকেও অতিরিক্ত সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো সেতুতে কোনো ভারী যানবাহন যেন না উঠতে পারে, সেই কঠিন-কঠোর আইনিব্যবস্থা প্রশাসনকেই গ্রহণ করতে হবে। এমন মৃত্যুর মিছিল যেন আমাদের স্তব্ধ করে না দেয়- সেটাই আমাদের কাম্য।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে