Views Bangladesh Logo

অচল দক্ষিণ ঢাকা সচল করুন, জনদুর্ভোগ কমান

ক্ষিণ ঢাকা যেন এখন নরকের একাংশ। বেশিরভাগ সরকারি অফিসই এখানে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বড় বড় হাসপাতাল-মার্কেট। এর আশপাশের এলাকাগুলোও ঘনবসতিপূর্ণ। যতসব দাবি-দাওয়া, আন্দোলন-সংগ্রামের চাপ প্রথমে দক্ষিণ ঢাকার ওপর দিয়েই যায়। ভিআইপিদের চলাচলের কারণেও দক্ষিণ ঢাকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রায়ই দিনের একটা সময় বন্ধ থাকে। এর মধ্যে বৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ি। সব মিলিয়ে দক্ষিণ ঢাকা বর্তমানে প্রায় অচল অবস্থা। জনদুর্ভোগ চরমে।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চল কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে কোনো দিকেই গাড়ি এগোচ্ছিল না। সড়কগুলোর সংযোগস্থলে রিকশা-বাস-প্রাইভেটকারে তৈরি হয় ভজঘট। অনেক মোটরসাইকেল চালককে যানজটে আটকে বৃষ্টিতে কাকভেজা হতে হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে গুলিস্তান থেকে শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন হয়ে কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত সড়ক ছিল বন্ধ। মেয়র পদে শপথের দাবিতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা রাস্তা দখলে নেয়ায় যান চলাচল করতে পারেনি। পাশাপাশি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেও ইশরাকের কিছু সমর্থক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। এর পাশেই ছিল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন। এসব ঘটনায় সদরঘাট, বাবুবাজার, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শাহবাগ, শান্তিনগর, মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেকটা অসহায় দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। তারা বিভিন্ন সড়কে ডাইভারশন দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলোও যানজট থেকে মুক্তি পায়নি। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক ছিল, উল্টো পথেও যাওয়ার উপায় ছিল না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে গভীর রাত হয়ে যায়।

এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই। বেশিরভাগ সরকারি সদর দপ্তর দক্ষিণ ঢাকায় বলে যে কোনো দাবি-দাওয়া পেশ করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রথমে সমবেত হন হয়তো সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে, নয়তো সচিবালয়ের সামনে, প্রেসক্লাবের সামনে, শাহবাগ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল চত্বরে। যেদিকেই লোক জড়ো হোক না কেন বাধ্যতামূলকভাবেই একটি প্রধান সড়ক আটকে দেন। আর দক্ষিণ ঢাকার হাতেগোনা দুচারটে সড়কের মধ্যে একটা-দুটা আটকে দিলেই সারা ঢাকাজুড়ে জ্যাম লেগে যায়।

এ যেন এক অভিশপ্ত অবস্থা। যার থেকে পরিত্রাণের আশা হয়তো শহরবাসীর নেই। সরকারই-বা কী করবে, জনগণই-বা কী করবে কেউ যেন কিছু বুঝতে পারছে না। সবাই যেন একটা ফাঁদে পড়ে গেছে। যে কোনো দাবি-দাওয়া জানাতে রাস্তা আটকাতে হয় কেন এর উত্তর কেউ দিতে পারে না? জনগণ নিজেরাই চরম ভোগান্তি সহ্য করছে, আবার নিজেরাই নানা পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সরকারও চায় এ থেকে মুক্তি পেতে; কিন্তু সরকারেরও যেন করণীয় কিছু নেই। সব মিলিয়ে একটা অসহায় অবস্থা বিরাজ করছে।

তারপরও আমরা চাই এই অভিশপ্ত অবস্থার অবসান ঘটুক। সরকার ও জনগণ উভয়পক্ষ একটু সহনশীল হোক। নিজের ক্ষতি করে কোনো দাবি আদায় করা যায় না। বর্তমানে দেশ যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এটা তারই নজির। সরকার ও জনগণের বোঝাপড়া ছাড়া এ থেকে উত্তরণের পথ নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ