Views Bangladesh Logo

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন

রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টি (ববি) যারা নিজ চোখে দর্শন করেছেন, তারা জানেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি এখনো বেশ অগোছালো। ভবনগুলো ছাড়া ছাড়া, অনেক জায়গায় জঙ্গলের মতো এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি দূর থেকে অনেকটা পরিত্যক্ত মনে হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স হয়েছে ১৪ বছর। ২০১১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পর ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তার চেয়েও দুঃখজনক খবর, নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সব সময়ই অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে।

গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে সেশনজট, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা। ব্যাহত হচ্ছে অবকাঠামোসহ নানা উন্নয়ন কাজ।

প্রাপ্ত খবরে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরে যারা উপাচার্য হয়েছেন, তারা সবাই বিভিন্ন কারণে আন্দোলনের মুখে পড়েছেন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে শুরু হওয়া আন্দোলনে শিক্ষার্থীদেরও উসকে দেয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে পারেননি উপাচার্যরা। অস্থিরতা সামলাতে বেশির ভাগ সময় ব্যয় হয়েছে তাদের। সর্বশেষ উপাচার্য শুচিতা শারমিনের পদত্যাগ দাবি করে দুই দফায় তার কার্যালয় ও বাসভবনে তালা দেয়ার পাশাপাশি বাসভবনের মূল ফটক ভাঙচুর করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪টি হলে মাত্র দেড় হাজার জনের আবাসন সুবিধা আছে। ২৫টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ৭৫টি কক্ষ প্রয়োজন। আছে মাত্র ৩৬টি। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক-সংকটে অধিকাংশ বিভাগে সেশনজট বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম ছয় মাস থেকে দেড় বছর সেশনজটে আটকে থাকছেন। এতে মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা বাড়ছে।

দেশের ৩৩তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা করে। বরিশাল অঞ্চলে কোনো উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই এই অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা তৈরি হয়। অনেক দেরিতে সেই স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলেও রাজনৈতিক কারণে এখনো তা রয়ে গেছে অধরা। বিশ্ববিদ্যালয় আছে; কিন্তু সেখানে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কার্যক্রম নেই- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে, দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এর ওপর নির্ভরশীল- তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়টির এমন বেহাল দশা কেন?

বারবার আন্দোলনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারি, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতায় এমনিতেই দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দলাদলিতে অস্থিরতা বিরাজ করায় শিক্ষার্থীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যত আন্দোলন হয়েছে, বেশির ভাগের নেপথ্যে ছিল শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও দ্বন্দ্ব। যেখানে নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের উসকে দেয়া হয়েছে। কিছু দাবি-দাওয়া জুড়ে আন্দোলনকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের মোড়ক দেয়ার কৌশল নেয়া হয়; কিন্তু আদতে শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হয়নি; বরং ক্ষতি হয়েছে।

আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়টির দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুদৃষ্টি দিক। অস্থিতিশীল পরিবেশ দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন নয়, এটি একটি জাতির স্বপ্ন; এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি পুরো জনপদকে বদলে দিতে পারে। সেখানে যদি একটি বিশ্ববিদ্যালয় তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে তা অত্যন্ত দুঃখের কারণ হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ