ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে
বিশ্বস্ত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে গত ৫ বছরের আড়াই লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলীকরণের মাধ্যমে নিয়মিত ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের মাধ্যমে ৯৩ হাজার কোটি টাকা নিয়মিত করা হয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলীকরণের মাধ্যমে নিয়মিত ঋণ হিসেবে দেখানোর প্রবণতা যে কোনো বিচারেই উদ্বেগজনক। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এভাবে ঢালাও পুনঃতপশিলীকরণের সুবিধা দিয়ে প্রকৃত পক্ষে খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করে ফেলা হচ্ছে। তাই তারা মনে করছেন, ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ প্রক্রিয়া কঠিন করে তোলা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ঋণ হিসাব যাতে বারবার পুনঃতপশিলীকরণ সুবিধা না পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। যারা ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে খুব একটা অবহিত নন তারা ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। তাই এ ব্যাপারে একটু আলোচনা করা যেতে পারে।
ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ হচ্ছে কোনো ঋণ হিসাব থেকে নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি আদায় না হবার আশঙ্কা থাকলে ঋণ গ্রহীতা ব্যাংকের কাছে তার ঋণের কিস্তি প্রদানের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড আবেদনকারীর অবস্থা এবং বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, তাকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধু ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বর্ধিতকরণকেই ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ বলা হয় না। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা এগিয়ে আনাকেও ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ বলা হয়; কিন্তু আমাদের দেশে ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ বলতে কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বর্ধিতকরণকেই বুঝায়। কারণ কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের আগে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে চান, তিনি যে কোনো সময় তা করতে পারেন। ব্যাংক এ ধরনের ঋণ গ্রহীতাকে বা উদ্যোক্তাকে বরং উৎসাহিত করে। উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত একজন ঋণ গ্রহীতাকে তার আর্থিক অবস্থা, ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে কিস্তি পরিশোদের দায় থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়ার জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করার সুযোগ প্রদান করে থাকে; কিন্তু আমাদের দেশে যেসব ঋণখেলাপি আর্থিক এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী নন তারা পুনঃতপশিলীকরণ সুবিধা খুব একটা পান না। যারা আর্থিক এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান, তারা যে কোনো সময় নানা অজুহাতে তাদের ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে নিতে পারেন। কোনো ঋণ হিসাব একবার পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে নেয়া হলে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সেই ঋণ হিসাবকে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকৃত করা যায় না। ফলে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা খেলাপি ঋণের দায়মুক্ত একজন ঋণ গ্রহীতার মতো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন। যেমন বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে স্থানীয় অথবা জাতীয় নির্বাচনের কোনো ঋণখেলাপি প্রার্থী হতে পারেন না; কিন্তু নির্বাচনের আগে যদি সংশ্লিষ্ট প্রার্থী তার ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে নিতে পারেন তাহলে তার পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ৯৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করা হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে এই সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক ব্যক্তিরা তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব ঢালাওভাবে পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রদর্শনের সময় অবলোপনকৃত ঋণাঙ্ক, অবলোপনকৃত ঋণাঙ্ক এবং মামলাধীন প্রকল্পে কাছে দাবিকৃত খেলাপি ঋণকে অন্তর্ভুক্ত করে না। তাই ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণকে প্রদর্শিত এবং অপ্রদর্শিত এই দুই নামে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এভাবে কোনো সংজ্ঞায়ন করে না। তারা কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশকেই আড়াল করে রাখে। একজন অর্থনীতিবিদ এই অবস্থাকে ‘কার্পেটের নিচে ময়লা রেখে ঘর পরিষ্কার দেখানোর প্রচেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমরা আলোচনার সুবিধার্থে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণকে প্রদর্শিত এবং অপ্রদর্শিত খেলাপি ঋণ হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি, যদিও এটা কোনো ব্যাংকিং পরিভাষা নয়।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা শুরু জাতীয় পার্টির আমলে। গত শতাব্দীর মধ্য দশকে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ব্যাংকিং খাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হলে খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। উল্লেখ্য, বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। তবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বেশি এবং এর প্রকৃতিও স্বাভাবিক নয়। সাধারণত ঋণ গ্রহীতারা নানা প্রতিকূলতার কারণে নির্ধারিত সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না। ঋণের কিস্তি পরিশোধের সামর্থ্য আছে অথচ কিস্তি পরিশোধ করছে না, এমন দৃষ্টান্ত খুব একটা পাওয়া যায় না; কিন্তু আমাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে যাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের সামর্থ্য আছে তারাই বেশি হারে ঋণখেলাপি হয়। তারা আসলে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। আমাদের দেশে ঋণ গ্রহণের জন্য যেমন আর্থিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজন হয়, তেমনি ঋণখেলাপি হবার জন্যও আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দরকার হয়। আশির দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অপ্রতিরোধ্য গতিতে শুধু বাড়ছেই। বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) পরামর্শে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রকাশিত হয়ে পড়ে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এবং যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তারা খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কারও কাছে প্রকাশ করতে চায় না। তারা বরং খেলাপি ঋণকে নানা প্রক্রিয়ায় আড়াল করে রাখতেই ব্যস্ত থাকে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা পরিসংখ্যানের প্রতি দৃষ্টি দিলেই অনুধাবন করা যাবে। যদিও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়বে না। মন্ত্রী তার কথা রাখতে পারেননি। তার সময়ে কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিবর্তে নানা আইনি মারপ্যাঁচে খেলাপি ঋণকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রদর্শিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার সময় অর্থাৎ ২০১৪ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এটা দৃশ্যমান বা প্রদর্শিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এর সঙ্গে পুনঃতপশিলীকৃত, মামলাধীন এবং অবলোপনকৃত ঋণাঙ্ক যোগ করলে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ পদ্ধতি। ১৯৯১ সাল থেকে যে সরকারই ক্ষমতায় থেকেছে তারা ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ পদ্ধতি চালু রাখে।
ব্যাপকভাবে খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করা হয় ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার আমলে। দাতাদের শর্তানুযায়ী, ১৯৯১ সালের ২০ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পত্রিকার মাধ্যমে ১৭১ জন বৃহৎ ঋণখেলাপির একটি বিশাল তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় স্থানপ্রাপ্তদের কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল আড়াই কোটি টাকা থেকে তদূর্ধ্ব। সেই সময় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশিত তালিকায় যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম স্থান পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগামীতে এ ধরনের আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে; কিন্তু পত্রিকার মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করায় তালিকায় স্থানপ্রাপ্ত ঋণখেলাপিরা অত্যন্ত মনোক্ষুণ্ন হন। তারা সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু করেন। অনেকেই অভিমান করেন সরকারের ওপর। পরে সরকার ঋণখেলাপিদের সন্তুষ্ট করার জন্য মোট খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ এককালীন নগদে ব্যাংকে জমাদানের শর্তে খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের মাধ্যমে নিয়মিত করার সুযোগ দান করে। সেই সময় থেকে প্রতিটি সরকার আমলেই খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ অব্যাহত রাখে। সেই সময় একটি ঋণ হিসাব প্রথমবার পুনঃতপশিলীকরণের জন্য মোট খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যাংকে জমা দিতে হতো। দ্বিতীয় বার এ ধরনের সুযোগ গ্রহণের জন্য ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বারের জন্য ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা দিতে হতো। তবে এই আইনে একটি ফাঁক ছিল। কোনো ঋণ হিসাব কতবার পুনঃতপশিলীকরণ করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করে আইনে বলা ছিল না। ফলে ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়ে অনেকেই তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব বারবার পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে নেয়। নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী তার ঋণ হিসাব ১২ বার পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ঋণ হিসাব সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃতপশিলীকরণের বিধান করে দেয়।
ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের মাধ্যমে কোনো একজন উদ্যোক্তা বা ঋণ গ্রহীতা নিজেকে ঋণখেলাপির কলঙ্কিত পরিচয় থেকে মুক্ত করতে পারেন। কারণ কোনো ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করা হলে সেই ঋণ হিসাবধারীকে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের আইনটি সবচেয়ে দুর্বল করা হয়েছে গত সরকার আমলে যখন আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী ছিলেন সেই সময়। মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ দেয়া হয়। এই সুযোগ গ্রহণ করে ৩৮ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব নিয়মিত করে নিয়েছে। যখন পুনঃতপশিলীকরণের মেয়াদ শেষ হবে তখন দেখা যাবে বিরাট অঙ্কের খেলাপি ব্যাংকগুলোর কাঁধে চেপে বসেছে।
দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছরের জন্য গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা বাতিল করা যেতে পারে। একই সঙ্গে আগামীতে একবারের বেশি কোনো ঋণ হিসাাব পুনঃতপশিলীকরণ না করার বিধান চালু করা প্রয়োজন। কারণ কেউ যদি একবার পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ নিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে আবারো এমন সুযোগ দেয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আর যারা জাতীয় অথবা স্থানীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন তাদের ক্ষেত্রে এক বছর আগে থেকেই পুনঃতপশিলীকরণ বন্ধ রাখা যেতে পারে। এমন আইন করা হলে যে বা যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা এক বছর আগেই তাদের ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ অথবা কিস্তি পরিশোধের মাধ্যমে নিয়মিত করে নেবেন। যারা বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাধারণত তারাই অধিক হারে খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করিয়ে থাকেন। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন না তারা এমনিতেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অযোগ্য বিবেচিত হওয়া উচিত। এ ধরনের নীতি বর্জিত মানুষ কখনোই ভালো মানুষ বলে বিবেচিত হতে পারেন না।
যারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধ করেন না তারা আমানতের খেয়ানতকারী। তাই তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া সঙ্গত হবে না। প্রয়োজনে ঋণখেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তা কোনোভাবেই আত্মসাৎ করা যাবে না এমন একটি চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার,বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে