Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

স্থবির গাজীপুর সচল করুন, পোশাক শিল্পের অরাজকতা দূর করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

ত তিন-চার দিন ধরে যারা গাজীপুরে যাচ্ছেন বা গাজীপুর পার হয়ে উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলায় যেতে চাচ্ছেন, তারাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে গাজীপুর কার্যত এখন স্থবির। এ অবস্থা চলছে গত দুমাস ধরেই। আন্দোলন মাঝে মাঝে স্তমিত হয়, দু-এক সপ্তাহ ভালো যায়, তারপরই আবার পুরোদমে শুরু হয়, কয়েকদিনের জন্য আবার রাস্তাঘাট স্থবির হয়ে পড়ে, কল-কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে, এতে করে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে, অন্য দিকে, দেশের শিল্পকারখানাও হুমকির মুখে।

গতকাল সোমবার (১১ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাস্তায় আটকে আছে পণ্যবাহী হাজারো যানবাহন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছেড়ে বিকল্প পথে যাওয়ার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি অনেক মানুষ। সব রাস্তা যানজটে স্থবির হয়ে গেছে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকার টিএনজেড গ্রুপের পাঁচটি কারখানার ১ হাজার ২০০ শ্রমিক। বকেয়া বেতন ও কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখার দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা দফায় দফায় বুঝিয়েও মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে পারেননি। শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কারখানা মালিক যদি শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে থাকেন, তাহলে তার আন্দোলন হবে কারখানায়, রাস্তায় কেন? এর কারণ হচ্ছে শ্রমিকরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতা চান। তাও সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিতে রাজি হয়েছেন। তাও কেন শ্রমিকরা রাস্তা আটকে রাখছেন? আর এত আন্দোলনের মুখেও কারখানা মালিকরা কেন শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখেছেন?

কিছু কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখেছেন আর কয়েক হাজার শ্রমিক মিলে রাস্তা আটকে লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করছেন। আমরা অবশ্যই শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। আমরা চাই অবশ্যই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা যথাসময়ে বুঝিয়ে দেয়া হোক; কিন্তু দেশ অচল করে তো দিনের পর দিন এমন আন্দোলন চলতে পারে না। মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোনো গভীর চক্রান্ত নিহিত। সরকারকে অবশ্যই এর সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। দফায় দফায় মালিকপক্ষের সঙ্গে বসেও কেন এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না? যদি মালিকপক্ষ ঠিকমতো বেতন দিতে না পারেন তাহলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হোক।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আশপাশের ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, কারখানা মালিকের প্রতি শ্রমিকদের কোনো রকম আস্থা নেই। বারবার কথা দিয়েও কথা না রাখার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেও আমরা পারিনি। বেতন না পেলে শ্রমিকরা বুঝবেন না সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু কারখানার মালিকদেরও কেন বোঝানো যাচ্ছে না?

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ভয়াবহ বিপদ নেমে আসছে। এখনই এই বিপদ প্রতিহত না করতে পারলে দেশের জন্য বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। রাস্তার যানজট হয়তো দূর করা যাবে দুদিনেই; কিন্তু পোশাক শিল্পে যে ভয়ংকর অরাজকতা ও সংকট দেখা দিচ্ছে, তার সমাধান কবে নাগাদ হবে আন্দাজ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের অনেকখানিই পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ