Views Bangladesh Logo

স্থবির সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সচল করুন

৯৬৮ সালে ফ্রান্সের ছাত্র-আন্দোলনের পর দেখা গিয়েছিল সে দেশের সংস্কৃতিতে একটা গণজোয়ার বয়ে যাচ্ছে। বই বিক্রি বেড়েছিল ৪০ গুণ। গান-নাটক-সিনেমায় সাংস্কৃতিক সর্ব অঙ্গনে ছাত্র-আন্দোলনের প্রভাব পড়ছে দারুণভাবে। কিন্তু আমাদের দেশে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। প্রকাশকরা জানাচ্ছেন বই বিক্রি অনেক কমে গেছে। আর দেশের কোথাও যে তেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই তা তো দেখাই যাচ্ছে। শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় সাংস্কৃতিক উৎসব লেগেই থাকে কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলো পতিত হয়েছে এক প্রকার ঝিমিয়ে-পড়া দশায়।

গতকাল রোববার (১৯ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আগে প্রতি মাসে অন্তত একটি নাটক হলেও মঞ্চায়িত হতো। শীত-বসন্তসহ বিভিন্ন উৎসব মৌসুমে হতো নাট্য উৎসবসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। গত মে মাসেও পাঁচটি ও জুনে এখানে চারটি নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর যেন ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। নাটক মঞ্চায়ন যেমন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কমেছে, তেমনি কমেছে অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও। আগস্ট-পরবর্তী সময়ে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়িত হয়েছে মাত্র চারটি নাটক। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে কোনো নাটকই মঞ্চায়িত হয়নি।

এরকম চিত্র রাজধানী ঢাকায়ও। অথচ ঢাকা উৎসবের নগরী। বিশেষ করে শীতের সময় তো প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও উৎসব লেগে থাকত। এখন ঢাকায় ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলছে। কিন্তু দর্শকের তেমন সাড়া নেই। এমন ঝিমিয়ে-পড়া চলচ্চিত্র উৎসব ঢাকায় আগে কখনো দেখা যায়নি। শিল্পকলা একাডেমিতেও আগের মতো কোনো সাড়াশব্দ নেই। নাটক মঞ্চায়নের সংখ্যা কমে এসেছে। অন্যান্য উৎসবও কখন কী হয় দর্শক জানে না।

সব মিলিয়ে সারা দেশেই সংস্কৃতিচর্চা ও উৎসব অনুষ্ঠানের কেমন এক ভগ্নদশা। প্রশ্ন হচ্ছে, এর কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর পর বেশ কয়েকটি মাজারে হামলা, বাউলদের বাড়িতে হামলার কারণে এরকমটা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারেরও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে কিছুটা অবহেলা আছে। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই মূলত এরকম হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে সংস্কৃতি অঙ্গন মুখর হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিল্পীগোষ্ঠী, আবৃত্তি মঞ্চ, সাংস্কৃতিক অঙ্গনগুলোও এখন বন্ধ আছে। এগুলো চালু হলে দেশে সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক হবে।

কিন্তু সাদা চোখে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন মোটেই স্বাভাবিক নেই। শুধু স্থবিরতা ও ঝিমিয়ে-পড়া দশা নয়, কেমন যেন একটা চাপা-আতঙ্ক। এই চাপা-আতঙ্কের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। সংস্কৃতিচর্চা ছাড়া যে কোনো জাতি স্থবিরদশায় পতিত হয়। আমাদের দেশের সংস্কৃতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসকে পুনর্জীবিত করতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রকেও যেমন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে তেমনি সমাজের প্রতিটি মানুষকে স্বতঃস্ফূর্ত ভূমিকা পালন করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ