Views Bangladesh Logo

বইমেলায় নজর কেড়েছে গণঅভ্যুত্থানের স্লোগানগুলো

মর একুশে বইমেলা ২০২৫ এ দর্শনার্থীদের কাছে দারুণ নজর কেড়েছে ২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত পোস্টারগুলো। শাহবাগ মোড় থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন পয়েন্টে গণঅভ্যুত্থানের স্লোগান সংবলিত পোস্টারগুলো সাঁটাতে দেখা যায়।

বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, বইমেলা সাজানো হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের রঙে। বিপ্লব, শোক আর আশার প্রতীক লাল-কালো আর সাদায় সাজানো হয়েছে এবারের বইমেলা। মেলার দৃশ্যপটে তুলে ধরা হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি। বাংলা একাডেমির প্রধান ফটকে বইমেলা উপলক্ষে বসানো হয়েছে বিশেষ তোরণ। তোরণের এক পাশে পানি হাতে মীর মুগ্ধ, আরেক পাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি। আছে মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে এগিয়ে চলা মিছিলের দৃশ্য। রয়েছে আন্দোলনে আহত সংগীদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার ছবিও। তোরণের চূড়ায় লেখা হয়েছে বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।’

ফটক পেরিয়ে বইমেলার বাংলা একাডেমি অংশে প্রবেশ করলে দৃষ্টি আটকে যায় পত্রিকার পাতায় ছাপা হওয়া আন্দোলনের মোড়-ঘোরানো বিভিন্ন দৃশ্যের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট। জুড়ে দেয়া স্লোগান গণঅভ্যুত্থানের রক্ত, মৃত্যু, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অগ্নিগর্ভ দিনগুলোতে টেনে নিয়ে যায়। আন্দোলনের স্মৃতিকে চির-অম্লান ও আন্দোলনের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে এই বইমেলায় রয়েছে ‘জুলাই চত্বর।’

নজর কাড়া স্লোগানগুলো
‘১৯৫২-এর চেতনা ২৪-এর প্রেরণা’, ‘অন্যায়কে রুখে দেয়ার শপথ জুলাই ২০২৪’, ‘বিপ্লব মানে গণচেতনার নতুন জাগরণ’, ‘ভয়ের দেয়াল ভাঙলো এবার জোয়ার এলো ছাত্র-জনতার’, ‘লাখো শহীদের দামে কেনা দেশটা কারও বাপের না’ ‘আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম, সংগ্রাম’, ‘রাষ্ট্র সংস্কার চাই’, আসছে ফাগুনে আমরা দিগুণ হবো’, আমার ভাই কবরে খুনি কেন বাহিরে’, যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তুমিই বাংলাদেশ’, ‘আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয়নি, নেবে না’ স্বৈরাচার স্বৈরাচার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘ফ্যাসিবাদের উৎখাত এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’, ‘হামার ব্যাটাকে মারলু ক্যানে’, ‘আমার খায় আমার পরে আমার বুকেই গুলি করে’, ‘যখন জাতি ঐক্যবদ্ধ হয় ইতিহাস নতুন পথ তৈরি করে’, ‘গণঅভ্যুত্থান বলে জনগণই চূড়ান্ত ক্ষমতা।’ ইত্যাদি।

লেখক, দর্শনার্থী, স্টলকর্মীরা যা বললেন
মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক দর্শনার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল-গণঅভ্যুত্থানের স্লোগান সংবলিত পোস্টারগুলো কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানুষ আগে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেনি, এখন স্বাধীন হয়েছে। এই স্লোগানগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মনের ভাব, প্রতিবাদ-ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তার (শেখ হাসিনা) প্রতি কতটুকু ক্ষোভ থাকলে মানুষ এসব স্লোগান দিতে পারে, পোস্টারগুলো তার প্রমাণ। দি রয়েল পাবলিশার্সের স্টলের দায়িত্বে থাকা মাছিদ হোসেন জানান, ‘পোস্টারগুলো ভালোই লাগছে। কারণ ছাত্র-জনতার যে আত্মত্যাগ, তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে।’

বইমেলা গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত পোস্টারগুলো বইমেলাকে ব্যতিক্রম করে তুলেছে বিষয়টি নিয়ে কবি মৃদুল মাহবুব ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, বইমেলা জাতীয় মননের প্রতীক। প্রতিটি দেশের ঐতিহাসিক কিছু অর্জন থাকে, নিজস্ব সংস্কৃতি ও বিশ্বাস থাকে। বিগত প্রায় ১৫ বছর বইমেলাকে সাজানো হয়েছে একটি পারিবারিক ন্যারেটিভকে প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে শোষণকে জারি রাখার কৌশল হিসেবে; কিন্তু গত বছর জুলাইতে গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এই জোর করে গড়ে তোলা ন্যারেটিভের ধ্বংস সাধন হয়েছে। ফলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, মিথ্যা ইতিহাসের বিরুদ্ধে গণমানুষের জয় হয়েছে।

স্লোগান সংবলিত পোস্টারগুলোকে ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে মৃদুল মাহবুব আরও বলেন ‘একাত্তরে এই জাতি যেভাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে একইভাবে চব্বিশে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছে প্রকৃত গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায়। তো এই নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সফল করতে হলে আমাদের নতুন ন্যারেটিভ সৃষ্টি করতে হবে। তারই অংশ হিসেবে বইমেলার বর্তমান সজ্জায় জুলাই স্প্রিট প্রধান্য পেয়েছে। এটা ভালো একটা উদ্যোগ। তবে সব কিছুর একটা ঐতিহাসিক সংযোগ থাকে। ২০২৪-এর জুলাই ও ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক ঐক্য আছে। সেটা আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব ছিল।’

মৃদুল মাহবুব বলেন, ‘এটা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম মেলা। ফলে আমি আশাবাদী আগামীতে যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। এভাবেই আমরা নতুন বাংলাদেশের নারেটিভ তৈরি করতে পারব।’ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে বলেছিলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তির পথে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক বইমেলা আয়োজনের চেষ্টা করেছি।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ