Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না, আতঙ্কে স্থানীয়রা

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে ফের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় প্রবেশ করেছে ১৫ হাজারেরও বেশি। শুধু তাই নয়, প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। শুধু নোম্যানস ল্যান্ডেই ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের মংডুতে বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর লড়াই তীব্র হওয়ায় জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা এপারে আসার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে বাংলাদেশি দালালরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে।


তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আর একজন রোহিঙ্গাকেও রাখার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।


বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে নৌকায় চড়ে টেকনাফ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে।


রোহিঙ্গাদের ৯ নম্বর ক্যাম্পের এক নম্বর ব্লকের হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আসছেন। তারা নাফ নদের পাশাপাশি অন্য সীমান্ত থেকেও আসছেন। স্থানীয় কিছু লোকজন তাদের বাংলাদেশে প্রবেশে সহায়তা করছে। তারা যে সবাই ক্যাম্পে আসছেন, তা নয়। ক্যাম্পের বাইরেও তারা অবস্থান করছেন।


তিনি বলেন, মংডুতে এখন যে তীব্র সংঘাত হচ্ছে, তাতে রোহিঙ্গারা আর সেখানে টিকতে পারছেন না। তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মি উভয়ের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।


টেকনাফের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল বাসার বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কয়েকদিন সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে ঢুকেছে। এখনো বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ঢুকছে। এরকম কমপক্ষে ৩০টি পয়েন্ট থেকে তাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে।


তিনি বলেন, দালালরা তাদের ঢুকতে সহায়তা করছে, যারা ঢুকছে, তারা প্রথমে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। এরপর যাদের ক্যাম্পে আগে আসা আত্মীয়স্বজন আছে, তাদের মাধ্যমে ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে আমরা আতঙ্কে আছি। এমনিতেই আমরা এখন বাংলাদেশিরা এখানে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছি, এরকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।


বিশ্লেষকরাও একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারে, তাহলে অপেক্ষায় থাকা দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা যে কোনো সময় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে।


মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক গণমাধ্যমে বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এমনিতেই তারা নানা সংকট তৈরি করছে ক্যাম্পে। সেখানে মাদক, অস্ত্র ব্যবসা হচ্ছে। নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আশ্রয় নিচ্ছে।


বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে বলে স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সরকারের যুগ্ম সচিব ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অফিসের অতিরিক্ত আরআরআরসি মো. শামছুদ্দৌজা নয়ন।


রোববার তিনি বলেন, ‘আগস্টের আন্দোলনের সময়ের সুযোগ নিয়ে অন্তত ৮ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে ক্যাম্পগুলোতে। এসব অনুপ্রবেশকারীরা কে কোন ক্যাম্পে রয়েছে, তার তালিকা ইতিমধ্যে করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে এ রকম বড় চালানের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেনি।


সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে এসেছে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মংডু সীমান্তে জড়ো হয়েছে আরও ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা। নাফ নদ ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয় মানুষ। যারা অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান তারা।


জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধ তীব্র আকার ধারন করেছে। রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই চলছে। মংডু টাউনের পাশে লাগোয়া পাঁচটি গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, নুরুল্লাপাড়া দখল করে ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করেছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। মংডুসহ আশপাশের রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।


স্থানীয়রা জানিয়েছে, টেকনাফের নয়াপাড়া, জাদিমুরা, মুছনীসহ কয়েকটি আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।


ক্যাম্পে থাকা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্পে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগের বাড়ি মংডুর দলিয়াপাড়া ও সুদাপাড়াতে। তারা আশ্রয় শিবিরগুলোতে থাকা তাদের আত্মীয়দের ঘরে উঠেছেন। গাদাগাদি করে থাকছেন।


রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, নাফ নদ পারাপারের জন্য টেকনাফের দালালদের মাথাপিছু পাঁচ থেকে ছয় লাখ কিয়েত দিতে হয়েছে। (মিয়ানমারের মুদ্রা ১৮ কিয়েত সমান ১ টাকা)। এক নৌকায় ১০-১২ জন রোহিঙ্গা এসেছে।


এদিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া, কুতুপালং, বালুখালী আশ্রয় শিবিরেও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ও আহত রোহিঙ্গাও আছে। তাদের আশ্রয়শিবিরে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো তাদের আবাসন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।


রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে রাখার মতো অবস্থা বাংলাদেশের নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ