Views Bangladesh Logo

কক্সবাজারে ভোটার হালনাগাদে বড় চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী

Esmat Ara Issu

ইসমত আরা ইসু

সারা দেশের অন্য জেলাগুলোর মতো কক্সবাজারেও চলছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। তবে এলাকাভেদে শহর ও গ্রামের কার্যক্রমের গতি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট।

তবে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কারণ হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকায় তারাও নাম তুলছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এ ব্যাপারে অনেকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও তারা মনে করেন, সঠিকভাবে সতর্কতা অবলম্বন করলে সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।

কক্সবাজার পৌরসভার বাসিন্দা আফিয়া বানু জানান প্রতি ঘরে ঘরেই দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা গিয়ে সবার তথ্য নিয়ে কাজ শেষ করছে এবং সেটা দারুণ একটি বিষয় বলে মনে করেন তিনি।

তবে এই কার্যক্রমের ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা যায় উপজেলা এবং গ্রামে।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য ফারিহা ইয়াসমিন জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে গিয়েই তথ্য দিতে হচ্ছে।

টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা আবদুল করিম (৩৫) জানান, শহরে হালনাগাদের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে; কিন্তু গ্রামে তুলনামূলক ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ অসচেতন হওয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে শহরের মানুষের চেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে।

পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা হালিমা খাতুন (৪৫) বলেন, তার সন্তানরা ভোটার উপযুক্ত হলেও তাদের তথ্য দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মীর কাছে যেতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়েছে।

ঈদগাহ উপজেলার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন (৫৫) জানান, কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করলেও অনেক সময় তাদের পাওয়া যায় না। যারা তথ্য দিতে পারেননি, তাদের পরবর্তীতে কেন্দ্রে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

রামু উপজেলার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম (২৭) অভিযোগ করেন, কিছু কর্মী সময়মতো উপস্থিত হচ্ছেন না, ফলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।

নুরুল আমিন (৪৮) জানান, দুর্গম এলাকায় যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি অনেক বৃদ্ধ মানুষ ফরম পূরণে অসুবিধায় পড়ছেন, তবে তাদের সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

মহেশখালীর শাপলাপুর বাজারের দোকানদার আবদুল মজিদ (৩২) এই উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির জন্য এটি খুব দরকার। তবে কাজ আরও দ্রুতগতিতে শেষ করার প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

মায়মুনা বেগম (৫০) আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবার সঠিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত হবে, তবে কর্মীরা যেন আমাদের কথা ঠিকমতো শোনেন ও সাহায্য করেন।’

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন জানান, কক্সবাজার একটি সীমান্তবর্তী বিশেষ জেলা হওয়ায় এখানে কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে কর্মীদের যেতে হচ্ছে এবং এখানে সব থেকে বড় ঝুঁকি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

ভোটার তালিকা হালনাগাদে যাতে কোনো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভোটার তালিকায় নাম না ওঠে সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হচ্ছে। যার জন্য অনেক ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ তথ্য এবং প্রমাণ উপস্থানও করতে হচ্ছে এই বিশেষ এলাকার মানুষকে।

তিনি জানান, স্কুলের শিক্ষক, কলেজের শিক্ষক এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।

৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে যেহেতু তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা বা অন্য দেশের কোনো নাগরিক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ যেন ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত না হয় সে দিকে খেলায় রাখতে নির্দেশনা আছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় শহর ও গ্রামে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট। তথ্য সংগ্রহের অনিয়ম, কর্মীদের অনুপস্থিতি ও দুর্গম এলাকায় যাতায়াত সমস্যা গ্রামীণ ভোটারদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তবে যথাযথ তদারকি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সমস্যাগুলো সমাধান সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ