Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পোশাক শিল্পে অরাজকতার নেপথ্যে ঝুট ব্যবসা ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে তিন গ্রুপের লড়াই

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঝুট ব্যবসা ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিতে তিন গ্রুপের লড়াইয়ের কারণেই অস্থিরতা কাটছে না সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে। সরেজমিন স্থানীয়রা জানান, তারা তিন গ্রুপের লড়াই চোখের সামনেই দেখছেন। তাদের বর্ণনায়, গত ১৫ বছর শিল্পাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল আওয়ামী লীগের সাবেক এক এমপি এবং তার অনুগত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। গত ৫ আগস্ট প্রবল গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপির তিনটি গ্রুপ শিল্পাঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ওঠে। আর এর জেরেই শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন ঘটছে সংঘর্ষ, উৎপাদন বন্ধ থাকছে অধিকাংশ কারখানায়।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনের সদস্য কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১৪৪টি। গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১৪৪টি কারখানা বন্ধ ছিল। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ১১১টি সাভার, আশুলিয়া ও জিরানী এলাকায়। আর গাজীপুরে ৩টি কারাখানা বন্ধ আছে। ১ হাজার ৩০৯টি কারখানা ইতিমধ্যে আগস্ট মাসের বেতন দিয়েছে। ৮৩৫টি কারাখানা এখনো আগস্ট মাসের বেতন দিতে পারেনি। বিজিএমইএর তথ্য বলছে, শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে মূলত গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া ও জিরানী এলাকায়। আশুলিয়া ও আশপাশের এলাকায় সরেজমিন একাধিক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে, এ সময় কিসের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে, তারা কেউ জানেই না। একেকটা গ্রুপ একেক দিনে এসে বহিরাগত অসংখ্য লোকজন নিয়ে এসেছে প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল, পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক কারখানার শ্রমিকরা এসব বহিরাগত গ্রুপের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে রাস্তায় নামছে। পরে ভুল বুঝতে পারলেও ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যাচ্ছে। শিল্পাঞ্চলের লড়াই নিয়ে তিন গ্রুপের সংঘর্ষ সংঘাত প্রতিদিন চললেও এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে জড়িত কেউই এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আসেনি বলে স্থানীয়রা জানান। যদিও স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশ শক্ত অবস্থানে আছে।

তিন গ্রুপের লড়াই চলছে যেভাবে
সরেজমিন অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর ইপিজেডের ঝুট ব্যবসা দখলে নিতে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছে সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেয়ান মো. সালাউদ্দীন বাবু গ্রুপ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর গ্রুপ ও আইয়ুব খান গ্রুপ। ইপিজেড এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, ইপিজেডে দখলবাজি ও অস্থিরতায় সালাউদ্দীন বাবু গ্রুপের ছেলেরা কাজ করছে। তার পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যক্তিগত সহকারী শরিফুল ইসলাম। ৮ আগস্টের পর থেকে সাসা, সিকেডিএল, হোপলং, ওয়াইকেকে ও শান্তা নামক ফ্যাক্টরিতে বিশৃঙ্খলা, হুমকি, মালপত্র আটকে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া অন্তত ৪০টি কারখানায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বাবু বাহিনী। সালাউদ্দীন বাবুর এসব দখলদারিত্বে শরিফুলের নেতৃত্বে অন্তত ২০০ জনের একটি বাহিনী রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম মেহেদি মাসুম, আবু হানিফ, শাহিনুর রহমান শাহিন, মোস্তাফিজুর রহমান রনি, জাহাঙ্গীর মণ্ডল ও মামুন চৌধুরী।

মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও অভিযোগের বিষয়ে দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বাবুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল নাম্বারে চেষ্টা করলেও তার ঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে গত ১১ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় একটি সমাবেশ করেন দেওয়ান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বাবু। সমাবেশে বৃহৎ গামেন্ট শিল্প মালিকদের বেশ কয়েকজন অংশ নেন। সমাবেশে বাবু আশুলিয়া এলাকায় কারখানা চালু রাখার জন্য সবার প্রতি হাতজোড় করে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা কিংবা দখলের লড়াই এর সঙ্গে বিএনপি জড়িত নয় বলে দাবি করেন। আশুলিয়া ইপিজেড অস্থিরতায় ভূমিকা রাখছে আরেক প্রভাবশালী গ্রুপ আইয়ুব বাহিনী। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ আগস্ট প্রথম ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সালাউদ্দীন বাবুর বাহিনী ও আইয়ুব বাহিনী মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। জানা যায়, ইপিজিট কেন্দ্রিক শান্ত ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ কয়েকটি গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার চুক্তি রয়েছে মিজান নামের আওয়ামী লীগের এক ব্যক্তির সঙ্গে। সরকার পরিবর্তনের পর মিজানের কারখানায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আইয়ুব খানের বাহিনী।

গত ২০ আগস্ট ওই কারখানা থেকে ঝুটের গাড়ি বের করার চেষ্টা করে মিজানের কর্মচারীরা। কিন্তু সেখানে সালাউদ্দীন বাবুর পিএস শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিন শতাধিক ক্যাডার সেই মালের গাড়ি ইপিজেডের গেটে আটকে দেয়। একইভাবে আরও অন্তত আটটি কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে আইয়ুব বাহিনী। এর মধ্যে সাসাসহ কয়েকটি কারখানা দখলে আইয়ুব খান নিজেই গেছেন। আইয়ুব বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তার বিশ্বস্ত ক্যাডার আশুলিয়ার টিপু (হাতকাটা টিপু)। বাহিনীর অন্যদের মধ্যে রয়েছে সাগর, তানিম, মিন্টু, লিটন, সাগর, পারভেজ, কামালসহ অন্তত ৪০ জন। তারা সাসা, সিকেডিএল, তালিসমা, প্যাডক্স, পেক্সার, হোপলং, ওয়াইকেকে, শান্তাসহ অন্তত ৪০টি কারখানায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। ইপিজেডে দখলবাজিতে আরেক গ্রুপ হচ্ছে ধামসোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অব্দুল গফুর। তিনি নিজে সরাসরি কোনো কারখানায় যান না। তার গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছোট সহোদর আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার মনির। ৫ আগস্টের পর থেকে মনিরের নেতৃত্বে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বাক্সটার, ব্রেন্টন, চেরি, ইয়ংওয়ান, ঢাকারিয়া, এফসিআই, তালিসমা, প্যাডক্স ও পেক্সার কারখানায়।

মনিরের সঙ্গে এই বাহিনীর নেতা হিসেবে রয়েছেন তাদের বোনের স্বামী মিজানুর রহমান মিজান। মিজানের নেতৃত্বে ক্যাডার হিসেবে আলিম, সমির, ফারুক, সোহরাব, মাহবুব, শিমুল ও রুবেলসহ (ভাগ্না রুবেল) অন্তত ৫০ জনের বাহিনী ইপিজেডে বিভিন্ন দখলবাজিতে কাজ করছে। এর মধ্যে রুবেলের নেতৃত্বে ইপিজেডের গেটে তিন ট্রাক মাল ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগস্টের শেষে ইয়াংঅন থেকে ঝুট বের করার সময় গেটে রুবেলসহ ২০ থেকে ৩০ জনের একটি বাহিনী ট্রাক তিনটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে আব্দুল গফুরের দাবি দখল করতে নয়, ইপিজেডে গন্ডগোল থামাতে গিয়েছিলেন তিনি। ওইদিন সেখানে শ্রমিকদের আন্দোলন হচ্ছিল। যেহেতু তিনি ওই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান, তাই ইপিজেডের পরিচালক তার কাছে প্রশাসন সহায়তা চেয়েছিলেন। তাই তার লোকেরা সেই সহায়তাই করেছে।

গত ২৯ আগস্ট আব্দুল গফুরের ভাই ব্যারিস্টার মনিরের নেতৃত্বে ইপিজেডের হোপলং কারখানা দখলে নিতে যায় তার বাহিনীর ২০ থেকে ৩০ জনের একটি দল। কিন্তু ওই কারখানা আগে থেকেই দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল সালাউদ্দীন বাবু গ্রুপ। গফুর বাহিনীর লোকজন যাচ্ছে খবর পেয়ে ছুটে যায় বাবু বাহিনী। বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় জাহাঙ্গীর মণ্ডল। উভয় গ্রুপের দেখা হয় ইপিজেডের গেটে। গেটের মধ্যেই দুই গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে গফুর বাহিনীর কয়েকজন আহত হলে তারা পিছিয়ে যায়। এতেও থামেনি গফুর বাহিনী। প্রতিশোধ নিতে পরদিন স্থানীয় বলিভদ্র বাজারে গিয়ে জাহাঙ্গীর মণ্ডলের মার্কেটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এর এক দিন পর আবারও বলিভদ্র বাজার তালপট্টি গ্রামে গিয়ে জাহাঙ্গীরের বাড়ি ও অফিসে হামলা চালায় গফুর বাহিনী।

পনেরো বছর কারা নিয়ন্ত্রণ করেছে
ইপিজেড এলাকায় এতদিন নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের এমপি সাইফুল ইসলামের, সাভারের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীব, তেঁতুলতলা ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ ছিল সমরের হাতে। জিরাবো এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল আশুলিয়া আওয়ামী লীগের ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন আহম্মেদ ভূঁইয়া। আশুলিয়া চৌরাস্তার, জিরাবো এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল, পাথালিয়া ইউনিয়নের ফারভেজ চেয়ারম্যান ও সোহাগ মেম্বারের কাছে। এয়ারপুর এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক চেয়ারম্যান কবির সরকারের কাছে। এ ছাড়া যুবলীগের আশুলিয়া আহ্বায়ক মাইনুল মেম্বারের নিয়ন্ত্রণ করতেন কিছু এলাকা। তার সহযোগী ছিল তার ছোট ভাই শামিম আহম্মেদ। শামিম আশুলিয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিও ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে ঘড়ি দোকানের মেইকার থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি হবার সুবাদে কয়েকশে কোটি টাকার মালিক হয়েছে তিনি। বর্তমান আন্দোলনের পেছন থেকে উসকানিদাতাদের মাধ্যে তাকে গন্য করা হয়। আওয়ামী লীগের সব ধরনের নেতাদের মোবাইল বন্ধ থাকায় কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কেউ জানে না কিসের দাবিতে আন্দোলন

সরেজমিন সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চল ঘুরে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে তাদের নির্দিষ্টভাবে সম্মিলিত কোনো দাবি নাই। তারা কেউ কোনো নির্দিষ্ট দাবি বা দফার ভিত্তিতে কোনো একক সংগঠনের ব্যানারে এই আন্দোলন করছেন না। বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সুনির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া সংবলিত কোনো লিখিত বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সরেজমিন দেখা যায়, এসব খাপছাড়া আন্দোলন যে যার মতো করে চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত এবং কোনো দলের দাবির সঙ্গে অন্য দলের দাবির কোনো মিল নেই। বুধবার আশুলিয়া চৌরাস্তা এলাকায় ফলমল গার্মেন্টের সামনে এই প্রতিবেদকের কথা হয় কয়কজন আন্দোলনকারীর সঙ্গে। তারা কী জন্য আন্দোলন করছে, তা সুর্নিদিষ্টভাবে না বলতে পারলেও বলছেন তাদের নেতারা জানে। কয়েকজন নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায় দাদা গার্মেন্টসের সামনে। প্রথমে কথা বলতে আগ্রহী হলেও পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা আর কথা বলতে চাননি।

দুপুরের পর কথা হয় সোহেল রানা নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে, যিনি ফ্যাশন ইট গার্মেন্টসে প্রোডাকশনে কাজ করেন, বলছেন তাদের মজুরি বাড়ানোসহ কিছু দাবি ছিল। তাদের মূল দাবি ছিল টিফিন বিল বাড়ানো এবং হাজিরা বিল ৭৫০ টাকা থেকে ১ হাজারে উন্নিত করা, যা ইতোমধ্যে মালিক পক্ষ মেনে নিয়েছে। দাদা গার্মেন্টসের সামনে কথা হয় ইব্রাহীম নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে, তিনি আয়রনম্যান হিসেবে গত ৫ বছর কাজ করছেন। ভিউজ বাংলাদেশকে তিনি বলেন, তাদের কয়েকটি ফ্লোরের ইনর্চাজকে সরানোর দবিতে তারা আন্দোলন করছিল, যা আজকে মালিক পক্ষ মেনে নিয়ে তাদের অপসারণ করেছে। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে অন্য গামের্ন্টসগুলোর আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কথা হয় নাভা গার্মেন্টস এক নারীকর্মীর সঙ্গে, তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আছেন গত তিন দিন থেকেই। কিসের দাবিতে তাদের আন্দোলন, তা সঠিকভাবে তিনি জানেন না। তাদের লিডাররা আন্দোলন করতে বলছে বলেই তিনি এর সঙ্গে আছেন। জানা যায়, প্রতিদিন আন্দোলন বাবদ ১ হাজার টাকা করে পান তিনি। তার সঙ্গে কয়েকজকে দেখা যায়, যারা একই সুবিধার জন্য আন্দোলনে নেমেছেন।

মব জাস্টিসের সামনে অসহায় পুলিশ
স্থানীয় সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ আন্দোলন দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। কর্তব্যরত একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, ‘হঠাৎ করেই মব তৈরি হচ্ছে। একদল উত্তেজিত জনতা এসে ভাঙচুরসহ যা খুশি তাই করে চলে যাচ্ছে। এই উত্তেজিত জনতা কারা, কেন শিল্পাঞ্চলে এসেছে কিংবা তারা কি চায়, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। আবার একক দিন একেক অচেনা ‘বিক্ষুদ্ধ জনতার গ্রুপ’ চলে আসার কারণে মব নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে। কয়েকট বড় কারখানার সামনে সেনা সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এই টহলের কারণে অনেক বড় কারখানা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত।

উৎপাদন বন্ধের ক্ষয়ক্ষতি, অর্ডার বাতিল
চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন পোশাক শিল্পের মালিকরা। শ্রমিক অসন্তোষের ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। যথাসময়ে পণ্য শিপমেন্ট নিয়ে বাড়ছে চিন্তা। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে উৎপাদন শেষ করতে না পারলে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এয়ার শিপমেন্ট করতে হবে। এতে খরচ বাড়বে কয়েক গুণ। চলমান অস্থিরতা দমন করতে না পারলে ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখা কঠিন হবে। বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম বলেন, ‘চলমান শ্রমিক অসন্তোষ থামাতে না পারলে যথাসময়ে পণ্য রপ্তানি ব্যহত হবে। অন্যদিকে এ অবস্থা চলমান থাকলে বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশের ওপর আস্থা হারাবে। ফলে আগামী সিজনের জন্য যে পরিমাণ অর্ডার প্রয়োজন তা পেতে আমরা ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, এতে একদিকে যেমন মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্যদিকে শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ পর্যাপ্ত অর্ডার না থাকলে আমরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারব না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখতে হতে পারে।

পোশাক শিল্প রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। তিনি বলেন, শ্রমিক ভাইবোনদের অনেক দুঃখ আছে; কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস প্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। মালিক-মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করার কথাও দৃঢ় ঘোষণা দেন তিনি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ