ফারুক প্রশাসনের ২৮১ দিন
বিসিবিতে আবারও পরিবর্তনের গুঞ্জন
ফারুক আহমেদ পদত্যাগ করতে পারেন- বুধবার মাঝরাতের পর থেকে গুঞ্জনটা ক্রমেই ডালপালা মেলছিল। সেটা এখনো গুঞ্জনের পর্যায়েই আছে; কিন্তু স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে যা বলা হচ্ছে, তাতে গুঞ্জনটা দ্রুতই আনুষ্ঠানিকতা পেতে পারে! সে গুঞ্জন বাস্তবায়িত হয় কি না- সময়ই বলতে পারে; কিন্তু দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে যে অস্থিরতা চলছে- এটা নির্দ্বিধায় বলা যাচ্ছে। বোর্ডের অস্থিরতা অনূদিত হচ্ছে মাঠেও!
প্রকাশিত সংবাদ জানায়, বুধবার রাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাসভবনে গিয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। দুজনের আলোচনায় উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সে পরিকল্পনা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব যদি ফারুক আহমেদ স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক স্বেচ্ছায় যেতে না চাইলে দেশের ক্রিকেটে সংকট আসন্ন। তখন সরকার ও ক্রিকেট প্রশাসনের মাঝে শীতল একটা যুদ্ধ আসন্ন।
একদিকে সরকারকে পাশ কাটিয়ে ক্রিকেট কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব, অন্যদিকে সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপে এ ক্রিকেট প্রশাসককে সরানোও যাবে না। কারণ তিনি নির্বাচিত। নির্বাচিত বোর্ডের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) মেনে নেয় না। এটা করা হলে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে দেশের ক্রিকেট; যেমনটা জিম্বাবুয়ে এবং শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে হয়েছিল।
ফারুক আহমেদ স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালে অবশ্য কোনো ধরনের জটিলতার আশঙ্কা নেই। বিসিবির সাবেক এ প্রধান নির্বাচকের বোর্ড প্রধান হওয়ার পেছনে সরকারের আশীর্বাদ ছিল। এখন সরকার যদি পরিবর্তন চায়, এ পদ থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প কি আদৌ আছে ফারুক আহমেদের সামনে! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ২৫০ দিনেই কেন ফারুক আহমেদের ওপর থেকে সরকারি আশীর্বাদ সরে যাচ্ছে!
বলা হচ্ছে, তিক্ততার সূচনা হয়েছিল গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) নানা অব্যবস্থাপনা দিয়ে। যার অন্যতম, জুলাই বিপ্লবে আহতদের মাঠে হাজির করা নিয়ে। এ ইস্যুতে রীতিমতো লেজে গোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছিল। যা নিয়ে ফারুক আহমেদের সঙ্গে উপদেষ্টার এক সহকারীর বাকবিতণ্ডার খবর চাউর হয়েছে। ফারুক আহমেদ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার বোর্ডের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঘিরে নানা নেতিবাচক খবর রটেছে। সবচেয়ে বড় শিরোনাম ছিল খোদ বিসিবি প্রেসিডেন্টকে নিয়েই। সেটা স্থায়ী আমানতের অর্থ স্থানান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে।
এ প্রসঙ্গে বিসিবির ব্যাখ্যা ছিল, ‘অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করে অন্য ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হয়েছে।’ কিন্তু এ কাজটা তো করার কথা বোর্ড সভায় আলোচনা করে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে ২৫০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে- এমন দাবিও করা হয়েছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে। এ প্রসঙ্গে বিসিবি থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তাতে বলা হয়েছিল, ‘বোর্ড প্রেসিডেন্ট একক সিদ্ধান্তে পরিচালনা পর্ষদের অজ্ঞাতে ব্যাংক পরিবর্তন কিংবা লেনদেনসংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান করতে পারেন না। লেনদেনে স্বাক্ষর প্রদানকারী হিসেবে দুজন বোর্ড পরিচালক আছেন- ফিন্যান্স কমিটি চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহা ও টেন্ডার ও পারচেজ কমিটি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম।’
ফারুক আহমেদের বোর্ড ছাড়া এ-সংক্রান্ত আলোচনার সঙ্গে দৃশ্যপটে এসেছেন জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান বর্তমানে আইসিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। আগামী মাসেই সে চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। তারপর নাকি খণ্ডকালীন সময়ের জন্য বোর্ড প্রেসিডেন্ট হতে পারেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। গুঞ্জন আছে- বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বও নিতে পারেন সাবেক এ অধিনায়ক। এখন দেখার বিষয়, সে গুঞ্জন বাস্তবতায় রূপ নেয় কি না!
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্র ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর ২১ আগস্ট স্বেচ্ছায় বিসিবি প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়েন নাজমুল হাসান পাপন। তার বোর্ডে থাকা দুই পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি মনোনীত হয়েছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কোটায়। সে কোটায় পরিবর্তন এনে এনএসসি ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে পরিচালক মনোনীত করে। পরে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক আহমেদ। বোর্ড পরিচালক হওয়ার পর নানা কার্যক্রমে প্রভাব ছিল নাজমুল আবেদীন ফাহিমেরও। সরকারের আশীর্বাদ নিয়ে এনএসসি কোটায় বোর্ডে আসার পর নানা ইস্যুতে ফারুক আহমেদের মত বিতর্ক ছিল নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে নিয়েও।
মাহবুব সরকার : ক্রীড়া সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে