খসড়া গাইডলাইন প্রকাশ
বাংলাদেশে আসতে প্রস্তুত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট স্টারলিংক
স্পেসএক্সের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে প্রস্তুত। দেশের প্রত্যন্ত ও অনুন্নত এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) একটি গাইডলাইন তৈরির কাজ করছে।
মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর’ নামে একটি খসড়া গাইডলাইন প্রকাশ করেছে, যার ওপর মতামত গ্রহণ চলবে আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
এতে বলা হয়েছে, এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও পরিষেবা নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ১০০ শতাংশ বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই), বিদেশি অংশীদারত্ব, যৌথ উদ্যোগ বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্থাটিকে সরকারের এফডিআই নীতি অনুসরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও অন্যান্য সংস্থার সব নিয়ম, প্রবিধান ও নির্দেশাবলিও প্রযোজ্য হবে।
লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা দিতে পারবে সেগুলো হলো- ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা, ইন্ট্রানেট পরিষেবা (দেশীয় ডেটা যোগাযোগ), ইন্টারনেট অব থিংস ও মেশিন-টু-মেশিন যোগাযোগ, গতি পরিষেবায় আর্থ স্টেশন, আর্থ এক্সপ্লোরেশন স্যাটেলাইট পরিষেবা, রিমোট সেন্সিং বা আবহাওয়া-সংক্রান্ত পরিষেবা ও বিটিআরসি অনুমোদিত অন্যান্য পরিষেবা।
তবে এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ), সম্প্রচারে, স্যাটেলাইট আইএমটিভিত্তিক পরিষেবা বা টেলিযোগাযোগ পরিষেবা দিতে পারবে না।
এই নিবন্ধনের জন্য আবেদন ফি ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে অধিগ্রহণ ফি হবে ১০ হাজার ডলার ও বার্ষিক ফি হবে ৫০ হাজার ডলার। এ ছাড়া, টার্মিনাল প্রতি বার্ষিক স্টেশন বা টার্মিনাল ফি দিতে হবে ২০ ডলার করে। নির্দেশিকা অনুসারে, লাইসেন্সের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক নিরীক্ষিত মোট রাজস্বের সাড়ে পাঁচ শতাংশ দিতে হবে বিটিআরসিকে। মোট রাজস্বের আরও এক শতাংশ ‘মহাকাশশিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’র অংশ হিসেবে দিতে হবে।
২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্টারলিংক প্রতিনিধিদল বিগত সরকারের সময় একাধিকবার বৈঠক করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. আশিক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছে স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে স্টারলিংক বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্স পেতে সরকারের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।
প্রস্তাবিত স্টারলিংকের মতো সেবাদাতাদের আইপিডিআর (ইন্টারনেট প্রোটোকল ডিটেইল রেকর্ড), টিডিআর (ট্রান্সাকশন ডিটেইল রেকর্ড) এবং সিডিআর (কল ডিটেইল রেকর্ড) সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। তবে স্টারলিংককে দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা পরিচালনায় আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) থেকে ব্যান্ডউইডথ সংগ্রহ করতে হবে।
বিশ্ববাজারের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি স্পেসএক্স বর্তমানে ৬০টিরও বেশি দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদান করছে, যেখানে প্রায় ৪৫১৯টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে। এ ছাড়া ব্রিটিশ কোম্পানি ওয়ানওয়েবও কয়েক শত স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে। অন্যদিকে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট কাভারেজ প্রদানের জন্য আগামী কয়েক বছরে ৩২০০টিরও বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছেন।
তবে, এই প্রযুক্তির খরচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। স্টারলিংকের সেবার মাসিক চার্জ প্রায় ১২০ ডলার এবং হার্ডওয়্যার সেটআপ খরচ ৩৫০ ডলার থেকে ৫৯৯ ডলার। এর বিপরীতে, বাংলাদেশের স্থানীয় ইন্টারনেট সেবাদানকারীরা ৫ এমবিপিএস ব্রডব্যান্ডের মাসিক খরচ প্রায় ৫০০ টাকা এবং মোবাইল ইন্টারনেটের জন্য ৩০ জিবি ডেটার জন্য মাসিক খরচ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা (৪ থেকে ৫ ডলার)।
এ বিষয়ে টেলিকম পলিসি বিশ্লেষক মোস্তফা মাহমুদ হুসাইন ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘স্টারলিংক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে ইন্টারনেট ডেটার প্রাইস নিশ্চয়ই কমাবে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে