জলাবদ্ধতা থেকে ঢাকাবাসীকে উদ্ধার করুন
গত শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টার ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা শহর। শনিবার দুপুর পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে ছিল রাজধানীর অনেক সড়ক। একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহর তলিয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। এ কারণে রাজধানীবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই।
বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বেশির ভাগ অঞ্চলই ছিল পানির নিচে। প্রধান সড়কগুলোও বন্যায় ভেসে যেতে দেখা গেছে। রাস্তার গলিগুলো নদী হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টির দিন ঢাকা শহরে এটা এখন সাধারণ দৃশ্য। শহরটি ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হচ্ছে, কারণ নিচু এলাকাগুলো সাধারণত হালকা বৃষ্টির পর পানিতে তলিয়ে যায়। ঢাকা পরিণত হচ্ছে বসবাসের অযোগ্য শহরে।
বছরের পর বছর যায়, মন্ত্রী আর মেয়র পরিবর্তন হয়; কিন্তু বর্ষায় ঢাকার জলাবদ্ধতা একই থাকে। এটা যেন নিয়তি হয়ে গেছে, ভারি বৃষ্টি হলেই ঢাকার কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “বর্ষাকালে ভারি বৃষ্টি হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পানি সরে যাবে।” কিন্তু এখন একটু বৃষ্টি হলেই ২৪ ঘণ্টা পানিতে বন্দি থাকতে হয়।
ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, গত এক যুগে জলাবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন তিন অর্থবছরে ব্যয় করেছে অন্তত ৭০০ কোটি টাকা; কিন্তু এর ফল কী? হালকা বৃষ্টিতেও ঢাকাবাসীকে তো একই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে। গতকালের পরিস্থিতি এটা আবারও প্রমাণ করল। দুই সিটি করপোরেশন যা করছে তা সাময়িক ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু না। বড় ধরনের কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করে তারা কেবল লোক দেখানো অর্থ ব্যয় করছেন। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প ছাড়া এই জলাবদ্ধতা কোনোভাবেই দূর করা সম্ভব না।
আমরা কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, ঢাকাবাসীকে এই জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। যদি প্রতি বছর, বারবার এই একই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে ঢাকাকে পরিত্যক্ত শহর ঘোষণা করতে হবে; কিন্তু ঢাকা আমাদের রাজধানী, যে কোনো মূল্যেই একে আমাদের রক্ষাও করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে