পরিবেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান, প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করুন
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যখন বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বাংলাদেশ যখন পরিবেশ বিপর্যয়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তখন বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে। উন্নয়নের নামে বন-পাহাড় উজাড় করা হচ্ছে, নদী-খাল ভরাট করা হচ্ছে, যেখানে-সেখানে গড়ে উঠছে কল-কারখানা, ইটের ভাটা, হাওরের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠছে পাকা সড়ক। সুন্দরবন পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না উন্নয়নের ছোবল থেকে, অথচ ঘূর্ণিঝড় থেকে এই সুন্দরবনই রক্ষা করে বাংলাদেশকে।
গতকাল বুধবার (৫ জুন) ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। গতকালই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ মাসে দেশজুড়ে উন্নয়নের নামে প্রায় ১১ লাখ ৫০ হাজার গাছ কেটেছে সরকারি নানা সংস্থা। তাপপ্রবাহের মতো প্রকৃতির বৈরী আচরণের মধ্যেও দেশের নানা প্রান্তে কাটা হচ্ছে হাজার হাজার গাছ। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গাছ কাটায় সবচেয়ে ‘পারদর্শী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বন বিভাগকে। সব মিলিয়ে ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সরকারের ২৫ প্রতিষ্ঠানের নাম। এর বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও গাছ কেটেছে। সব মিলিয়ে প্রকৃত সংখ্যা প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের চেয়ে তিন গুণ। এ ছাড়া একটি গাছের সঙ্গে কী পরিমাণ গুল্ম-লতা, ক্ষুদ্র গাছ ও জীববৈচিত্র্য প্রাণ হারিয়েছে, এর হিসাব পাওয়া যায়নি।
আঁতকে ওঠার মতো খবর নিঃসন্দেহে। একটি গাছ কাটাও যেখানে বাংলাদেশে প্রায় আত্মহত্যার শামিল সেখানে এক বছরে কাটা হয়েছে সাড়ে এগারো লাখ গাছ! সামাজিক বনায়ন দিয়েও যার ক্ষতি কোনোদিন পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ সামাজিক বনায়নের গাছ বড় হতে সময় লাগবে। অন্য দিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, কাজে-অকাজে যখন-তখন গাছ কাটার ফলে পরিবেশ দিন দিন তপ্ত হয়ে উঠছে।
লম্বা সময় ধরে গাছ কাটা, বন উজাড়ের ফল এখন ভোগ করতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। বৃক্ষ সংরক্ষণের জন্য দরকার আইন ও মহাপরিকল্পনা। সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, পরিবেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান, প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করুন। উন্নয়নের নামে আর একটি গাছও যেন না কাটা হয় সেই ব্যবস্থা করুন।
পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটি প্রথম ১৯৭৪ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। বাংলাদেশের ঢাকা, সিলেট, রাজশাহীতেও দিবসটি উদযাপিত হয়েছে। এ বছর সৌদি আরবের রিয়াদেও পালিত হয় পরিবেশ দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা’।
সৌদি আরব যখন মরুভূমিতে সবুজ বাগান করছে, তখন আমাদের উপকূলে দেখা দিয়েছে ভিন্ন ধরনের খরা। উপকূলের ১৯ জেলার নদ-নদী, মাটি এমনিতেই লবণাক্ত, তার ওপর ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় জলোচ্ছ্বাসে ২০ হাজার পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে গেছে। সেই পানি পান করা এবং কৃষি কাজের উপযোগী নয়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় দেশের উপকূলীয় এলাকায় ভিন্ন ধরনের এক খরা-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ভেঙে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা আশা করব, যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করে উপকূলবাসীকে নিরাপদ জীবন উপহার দেবে সরকার। পরিবেশ রক্ষায় আরও দ্বিগুণ সচেতনতা পালন করবে দেশের প্রতিটি মানুষ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে