সিন্ডিকেটের কবল থেকে ইলিশ বাঁচান
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ অন্য মাছের তুলনায় এতই আলাদা যে, এই মাছটির প্রতি বাঙালির অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে। মৌসুমে ইলিশ খেতে না পারলে তার আফসোস থেকে যায় সারা বছর। এমন কী অনেক পরিবারের জন্য তা সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো অপমানজনক ব্যাপার। ইলিশের এমনই কদর বাঙালি সমাজে যে, ইলিশ নিয়ে প্রচুর কবিতাও লেখা হয়েছে; কিন্তু সেই ইলিশ সব সময়ই থেকে যায় মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের আয়ত্তের বাইরে।
জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ আশা করেছিল, এবার ইলিশ খাবে প্রাণভরে। ভারতে আর ইলিশ দেয়া হবে না। যদিও খবরে জানা গেছে পূজা-উপলক্ষে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে ভারতে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন নানা আলোচনা। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত। সংশ্লিষ্ট লোকজনের ভাষ্য, ভারতে ইলিশ রপ্তানির খরচ চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারভেদে মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে ইলিশ চলে গেছে মধ্য ও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। এদিকে প্রজনন মৌসুম সামনে রেখে ১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। ফলে ইলিশের বাজার এখন খুব গরম।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পাঁচ বছর ধরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে আড়াই শতাংশ হারে। তবু ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। কারণ উচ্চ মূল্য। ভোক্তারা এ জন্য অসাধু চক্রের কারসাজিকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ চক্র না ভাঙলে ইলিশ সাধারণ মানুষের কাছে অধরা থেকেই যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী বা সাগর থেকে ইলিশ আহরণের পর ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে কয়েকটি হাত ঘোরে ইলিশ। প্রথমত জেলের কাছ থেকে যায় মহাজনের হাতে। এরপর আড়তদার হয়ে যায় পাইকারদের কাছে। সর্বশেষ যখন খুচরা ব্যবসায়ী কিংবা পাড়া-মহল্লার বাজারে পৌঁছায় তখন ইলিশের দাম এমন পর্যায়ে ওঠে যে, তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পাইকার ও মহাজন পর্যায়ে কারসাজি এবং রপ্তানির অনুমতি দেওয়ায় দাম কমছে না ইলিশের। পাইকারি ইলিশ বিক্রেতা জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, জেলে ইলিশ ধরার পর তারা কত দরে মহাজনের কাছে বিক্রি করে, সেখান থেকে পাইকাররা কত দরে কিনে এনে ঢাকায় বিক্রি করে তা ধাপে ধাপে তদন্ত করলে সিন্ডিকেট ধরা পড়বে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছিলেন, আগে দেশের মানুষ ইলিশ খাবে, তারপর রপ্তানি। এখন বলছেন, রপ্তানির সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ টনের বেশি। রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে ৩ হাজার টন। কতটুকু যাবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ইলিশ রপ্তানির যে অনুমতি হয়েছে, সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের না। পূজার সঙ্গে ইলিশ রপ্তানির কোনো সম্পর্ক নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কলকাতার ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করেছে।
কেন কীভাবে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে সেটা পরের কথা। প্রথম কথা হচ্ছে, ইলিশের এই সিন্ডিকেট ভাঙবে কবে? শুধু ইলিশ নয়, বাংলাদেশের সব ধরনের ব্যবসায়ই এখনো সিন্ডিকেটের কবলে। তাই কোনো কিছুরই দাম তেমন উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি। আমরা চাই সব সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্যমূল্যে সব পণ্য জনগণের স্বাভাবিক ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা হোক। ইলিশের মতো সুস্বাদু মাছ সাধারণ মানুষ খাবে না, তা হতে পারে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে