Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

গেছো শামুকের অস্তিত্ব রক্ষা করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

বিভিন্ন প্রকার শামুকের মধ্যে গেছো শামুক আমাদের বেশ পরিচিত। গাছের ডাল-পাতা আঁকড়ে ধরে এরা টিকে থাকে। এরা মূলত তৃণভোজী। এরা প্রকৃতির মধ্যে একটা ভারসাম্য রক্ষা করে। কোনো অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে গেলে এদের অনুপস্থিতি দেখে তা বোঝা যায়। তাই গেছো শামুককে বলা হয় দূষণের নির্দেশক। দুর্ভাগ্যজনক খবর হচ্ছে, আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই গেছো শামুক।

গতকাল শনিবার (৯ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কোনো এলাকায় যখনই বায়ুদূষণ কিংবা কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন সেখান থেকে হারিয়ে যেতে থাকে ‘গেছো শামুক’। এ কারণে প্রাণীটিকে পরিবেশ দূষণের নির্দেশক বলা হয়। তবে এই শামুক এখন বিলুপ্তির পথে। বন ধ্বংস ও ফসলে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে টিকে থাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গেছো শামুক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও জাপানের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রম চলে। রাঙামাটির হাতিপাড়া, সাপছড়ি, ওয়াগ্যাছড়ি, পাগলীপাড়া, বড়ইছড়ি, বিলাইছড়ি এলাকা, বান্দরবানের রেঁইচা, রমতিয়া, ক্রাউপাড়া, বাজালিয়া এলাকা এবং খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মানিকছড়ি, সিন্দুকছড়ি, মাইসছড়ি, লেমুছড়ি, কেঙ্গালছড়ি, কালাপাহাড় এলাকার গেছো শামুক নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষকরা জানান, গেছো শামুক ‘এম্ফিড্রমাস’ প্রজাতির একটি প্রাণী। এটি প্রকৃতির নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। তাই এই প্রাণী ‘ফ্লাগশিপ স্পিসিস’ হিসেবে পরিচিত। গাছে বসবাস করে বলে একে গেছো শামুক বলা হয়। তাদের প্রজনন প্রক্রিয়াও ঘটে গাছে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ প্রাণী প্রকৃতির জন্য উপকারী।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতির দূষণের নির্দেশক হিসেবেও কাজ করে গেছো শামুক। একসময় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া প্রায় সব এলাকায় এই শামুক বাস করত। তবে নানা প্রতিকূলতার কারণে বর্তমানে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলেই দেখা মেলে। দেশের সমতল অঞ্চল থেকে গেছো শামুক হারিয়ে গেছে। শুধু গেছো শামুক নয়, আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক জলজ ও স্থলচর শামুকও। এক সময় আমাদের বিলে-ঝিলে, নদী-নালায়, ক্ষেতে-খামারে ভরে ছিল নানা আকারের, প্রকারের শামুকের ঝাঁকে। তারা জমিতে জৈব সার উৎপাদন করত, জমির উর্বরা শক্তি বাড়াত।

শামুক-গবেষকরা জানিয়েছেন, শামুক কমে যাওয়ার কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে তারা মাছ ও হাঁসের খাদ্য কমে যাওয়া, পানি নষ্ট হয়ে যাওয়া, মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়া, পানিতে রোগ-জীবাণু বৃদ্ধি, ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়া, দেশি মাছ কমে যাওয়াসহ সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

অনেকে এখন শামুক চাষ করে আয়ের সংস্থান করেন; কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক বিচরণরত শামুকের অস্তিত্ব যদি আমরা রক্ষা করতে না পারি তা আমাদের সামগ্রিক প্রকৃতির জন্যই বিপদ। দেরি করে হলেও শামুকের অস্তিত্বের গুরুত্ব মানুষ বুঝতে পারছে। এখনো হয়তো সময় আছে শামুকের অস্তিত্ব রক্ষা করার। তাই আমরা চাই শামুকের অস্তিত্ব রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বন ধ্বংস রোধ করা হোক, এবং যেখানে সেখানে যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার পরিহার করা হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ