Views Bangladesh Logo

৭১ যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

ক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে উড্ডয়নের পর একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। তবে সেই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দুর্দান্ত দক্ষতা ও সাহসিকতায়। তার দক্ষতা, সংযম ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে ৭১ জন যাত্রী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। এখন গোটা দেশ এই সাহসী পাইলটের প্রশংসায় মুখর।

নাটকীয় উড্ডয়ন ও সংকটময় পরিস্থিতি
শুক্রবার (১৬ মে) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বিজি ৪৩৬-৪-এ। উড্ডয়নের পরপরই কন্ট্রোল টাওয়ারের নজরে আসে যে বিমানের একটি চাকা রানওয়েতে পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ঢাকায় জানানো হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

সাহস, সংযম ও পেশাদারিত্বের দৃষ্টান্ত
দুর্ঘটনার আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির মধ্যেও ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ অত্যন্ত ধীরস্থির ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে ফ্লাইটটি পরিচালনা করেন। বারবার কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুনির্দিষ্টভাবে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। শেষ পর্যন্ত, বিকেল ২টা ২০ মিনিটের দিকে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করে।

সাহসী পাইলট জামিল বিল্লাহ
বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করিয়ে ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ প্রমাণ করেছেন তার অসাধারণ দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব। তিনি একজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত এভিয়েশন অফিসার, যিনি অতীতেও জটিল পরিস্থিতিতে সফলভাবে বিমান পরিচালনা করেছেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম রওশন কবীর বলেন, ‘ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ খুবই অভিজ্ঞ ও যোগ্য পাইলট। তার দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পেশাদারিত্বের কারণেই যাত্রীরা নিরাপদে অবতরণ করতে পেরেছেন।’

এভিয়েশন সূত্র বলছে, ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহর ৮ হাজার ঘন্টা প্লাইং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

যাত্রীদের অজানা শঙ্কা
সর্বাধিক চমকপ্রদ দিক হলো—বিমানের ভেতরে থাকা যাত্রীদের কেউই জানতেন না তারা এক সম্ভাব্য ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখোমুখি। বিমানের অভ্যন্তরে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও বাইরে ছিল উত্তেজনা ও সতর্কতা।

একজন যাত্রী বলেন, ‘অবতরণের সময় একটু ঝাঁকুনি লেগেছিল, কিন্তু তেমন কিছু মনে হয়নি। নামার পর যখন দেখি রানওয়েতে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে—তখন বুঝি কী হতে পারত।’

আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমরা তো কিছুই জানতাম না। বিমানের ভেতরে স্বাভাবিকভাবেই চলছিল সবকিছু। যদি পাইলট সাহেব জানতেন না বা ঠিকভাবে ব্যবস্থা না নিতেন, তাহলে আমরা হয়তো আজ বেঁচে থাকতাম না।’

প্রস্তুত ছিল বিমানবন্দর
ঢাকায় জরুরি ভিত্তিতে রানওয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে দু’পাশে প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। পাইলট একাধিকবার কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জ্বালানি নিয়ন্ত্রিত রেখে সুনির্দিষ্টভাবে ফাইনাল অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করেন।

তদন্ত কমিটি গঠন
বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন চিফ অব সেইফটি ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদার। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চাকা খুলে যাওয়ার মতো ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রশংসায় ভাসছে ক্যাপ্টেন ও কেবিন ক্রুরা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাইলট জামিল বিল্লাহ ও কেবিন ক্রুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রশংসা করছেন সাধারণ মানুষ। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এই ধরনের কঠিন মুহূর্তে পাইলটের সংযম ও দক্ষতা ছাড়া এত মানুষ বাঁচানো সম্ভব হত না।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের পাইলটদের গুণগত মানের কথা এখন সবার জানা উচিত।’

বিশেষজ্ঞদের মত
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যান্ত্রিক ত্রুটি যেকোনো সময় ঘটতে পারে, কিন্তু দক্ষ পাইলট থাকলে বড় দুর্ঘটনাও এড়ানো সম্ভব। কক্সবাজার-ঢাকা ফ্লাইটের এই ঘটনা তারই বাস্তব প্রমাণ।





মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ