Views Bangladesh Logo

সচিবালয়ে বিকল্প অফিসের খোঁজ; ডিজিটালি পুনরুদ্ধার হবে নথিও

Kamrul  Hasan

কামরুল হাসান

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষগুলো থেকে পরিচালিত কার্যক্রম সচল রাখতে সচিবালয়ের ভেতরে বা বাইরে বিকল্প অফিস খুঁজছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকায় পুড়ে যাওয়া নথিগুলো পুনরুদ্ধারে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের টানা ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুনে ওই ভবনে থাকা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কম্পিউটার ও আসবাবপত্রও।

ভয়াবহ ওই আগুনে ৯তলা ভবনটির পঞ্চমতলায় আংশিক এবং ষষ্ঠ থেকে নবম তলা পর্যন্ত পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও তাদের তিনটি বিভাগের সব কক্ষ ও নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় কার্যক্রম চালিয়ে নেয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য বিকল্প অফিস খুঁজছে মন্ত্রণালয়গুলো।

ক্ষতিগ্রস্ত চারটি মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ভিউজ বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, ভবনটির পঞ্চমতলায় ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কম হলেও ষষ্ঠ থেকে নবম পর্যন্ত চারটি তলার একেবারেই বাজে অবস্থা। একই মন্ত্রণালয়ের অফিস বিভিন্ন তলা, ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় সবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও সমান নয়। তবে ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত তলাগুলো আপাতত কয়েকমাস ব্যবহারের কোনো সুযোগই নেই। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের। এ বিভাগের কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সব কক্ষই পুড়ে যাওয়া ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম তলায়। তাই সবচেয়ে বেকায়দায় আমরাই। সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম চালাতে এখনই অফিস চালু করতে হবে। যা এই ভবনে আগামী তিন মাসেও সম্ভব কি না জানি না’।

অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য এ বিভাগের কার্যক্রম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অর্থাৎ নগর ভবন বা সহজে স্থানান্তরযোগ্য কোনো উপযুক্ত জায়গায় করা যায় কি না, তা নিয়ে কাজ চলছে। সুপারিশগুলো খুব শিগগিরই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে দেয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি সাপেক্ষে নতুন অস্থায়ী অফিসে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের অফিসসহ আরো অন্তত চারটি কক্ষ আগুনে পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন একাধিক কর্মকর্তা। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে আগেই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

তবে সূত্র বলছে, বিজয়নগরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির শ্রম অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এই অফিসগুলো আপাতত বসতে পারে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামানকে প্রধান করে মূল্যায়ন কমিটি গঠিত হয়েছে, যারা শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে কাজ শুরু করবেন।
ক্ষতিগ্রস্ত অফিসকক্ষগুলো মেরামতের আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়েরই অধীন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা তুলনামুলক উপযুক্ত কোনো দপ্তরে অস্থায়ী অফিস করা হতে পারে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়েছে বলে আশাবাদী মন্ত্রণালয়টির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সপ্তমতলায় থাকা স্টোররুম সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের।

তারা আশা করছেন, পঞ্চমতলার তাদের অফিস হওয়ায় দুই একটা বাদে সকল অফিসকক্ষগুলো তারা হয়তো কিছুটা ভালো অবস্থায় পাবেন।

মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মো. সাজেদুর রহমান বলেন, যদি কোনো কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তবে তা আপাতত জিপিওতে স্থানান্তর হতে পারে।

ডিজিটাল ব্যবস্থায় নথি পুনরুদ্ধার করবেন কর্মকর্তারা

ভিউজ বাংলাদেশকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় দাপ্তরিক কাজে স্থবিরতা আসতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ নথি আগেই ডিজিটালাইজড করে রাখায় তা পুনরুদ্ধার ও কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এটি। গুরুত্বের বিচারে সব নথিই, বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো আগেই ডিজিটাল ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।

‘নথি হারিয়ে গেছে যারা ভাবছেন, তারা আসলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ডাটাবেজ থেকে এগুলো রিট্রাইভ (পুনরুদ্ধার) করে কাজে লাগানো যাবে’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন, যে কক্ষগুলো থেকে ই-নথি আদান প্রদান এবং ব্যবস্থাপনা করা হয় সেগুলো এখনো ভালো আছে বা ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম। হয়তো কাগজের নথিগুলো হারিয়েছে, যা কাজকে একটু ধীর করে দেবে; কিন্তু মন্ত্রণালয় অচল হবার কোনো আশঙ্কা নেই।

টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে ডিজিটালাইজড নথি আছে। প্রকল্প বা সিদ্ধান্তগুলো তো বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। তাই এর বিভিন্ন অনুলিপিও আছে। সুতরাং, নথি হারানোর শঙ্কাই নেই। শুধু আমাদের খাটুনি একটু বেড়ে যাবে এবং কাজের গতি আনতে কিছু সময়ের অপচয় হবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ