কপ ২৯- এ উপকূলের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরবেন ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ শাহিন
জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এ অংশ নিচ্ছেন ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ খ্যাতি পাওয়া তরুণ জলবায়ুকর্মী এস এম শাহিন আলম। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ১১ থেকে ২২ নভেম্বর চলমান এবারের সম্মেলনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের কথা তুলে ধরতে চান তিনি।
সাতক্ষীরার দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুরে জন্ম নেয়া শাহিন আলমের বেড়ে ওঠাও উপকূলে। প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধটা তার একেবারে ছোটবেলা থেকেই। আইলা, আম্ফান, বুলবুলসহ অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী শাহীন ছুটে বেড়িয়েছেন উপকূলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। উপকূলবাসীর দুঃখ-দুর্দশাকে আপন করেই অক্লান্ত কাজ করে গেছেন মানুষের কল্যাণে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দিয়েছেন খাবার পানি, কখনো শিশুদের জন্য হাজির হয়েছেন পুষ্টিকর খাবার কিংবা খেলনাসামগ্রী নিয়ে। গর্ভবতী নারীদের জন্য করেছেন পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা, কখনো বা স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিয়েছেন উপকূলের অবহেলিত কিশোরীদের কাছে। উচ্চকণ্ঠে তুলে ধরেছেন জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা উপকূলবাসীর কথা। সোচ্চার থেকেছেন অধিকার আদায়ের সব লড়াইয়েও।
কর্মপরিধি বাড়ায় যৌবনে পা রাখা শাহিন এখন পরিচিত ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ নামে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের ব্যাজ নিয়ে ন্যাচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের (ন্যাকম) অর্থায়নে কপ-২৯ এ অংশ নেয়া শাহিন আলম পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’- এর খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী। তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী। পরিবেশ, জলবায়ু ও উপকূল সংক্রান্ত বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সব সময়ই সরব গণমাধ্যমকর্মী শাহিন।
উপকূলের অস্বাভাবিক পরিবেশই তাকে জলবায়ুকর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে শাহিন আলম ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘এটা উপলব্ধি করতে পারি যে, আমরা নিজেরা না দাঁড়ালে কেউ আমাদের পক্ষে লড়বে না’।
তিনি আরও বলেন, এটি শুধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনেই অংশগ্রহণ নয়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় সংকটের গল্প বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরারও বিরাট সুযোগ।
২৪ বছরের তরুণ শাহিনের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চল। এটি এখন বাঁচা-মরার লড়াই।
‘কপ-২৯ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের সামনে আমাদের পরিস্থিতি তুলে ধরব। দাবি একটাই- উন্নত দেশগুলো যেন তাদের অতীতের ভুলগুলোর মাশুল আমাদের ওপরে চাপিয়ে না দেয়’- যোগ করেন তিনি।
শাহিনের স্বপ্ন, উপকূলের শিশুরা জন্মের পর থেকেই যেন মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পায়, উপকূলের মানুষকে যেন আর বাস্তুচ্যূত না হতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, যা উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে আশার আলো দেখাবে। শাহিন আলমের প্রত্যাশা, উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত অনুদান এবং সহায়তা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে শূন্যে আনতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে