Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

শান্ত, যেতে হবে বহুদূর

Mir Mahbubur Rahman

মীর মাহবুবুর রহমান

সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব পেয়েই বাজিমাত করলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এই তরুণের সুদক্ষ নেতৃত্বেই পরাক্রমশালী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করল বাংলার দামাল ছেলেরা। সিলেট টেস্টে ১৫০ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে টাইগাররা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। কিউদের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটিতে এটিই প্রথম টেস্ট জয়ের নজির। বাঁ হাতের স্পিন-ভেলকিতে কেন উইলিয়ামসনদের কাবু করে তাইজুল ইসলাম ম্যাচসেরা হলেও সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন শান্তও। তার মাঝে দেখা যাচ্ছে ভবিষ্যৎ অধিনায়কের ছাপ।

হ্যাঁ, শান্তই হতে পারেন বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ নেতা। বছর খানেক আগেও ভাবি অধিনায়ক হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজকে ভাবা হচ্ছিল। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মিরাজের নেতৃত্বেই খেলেছিলেন শান্ত। সেই আসরে তৃতীয়স্থান অর্জন করেছিল বাংলাদেশ দল। ৬ ম্যাচে ৬৪ দশমিক ৭৫ গড়ে শান্ত সংগ্রহ করেছিলেন ২৫৯ রান। তবে পারফরম্যান্সে তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন অধিনায়ক মিরাজ। ২৪২ রানের পাশাপাশি ১২ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারও উঠেছিল এই অলরাউন্ডারের হাতেই।

মিরাজ পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) অধিনায়কত্ব করেছেন। সেই স্মৃতি অবশ্য খুব একটা সুখকর নয়। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে মিরাজ ছাড়েন নেতৃত্ব। এরপর বেশ সমালোচনার শিকারও হন এই অলরাউন্ডার। মিরাজের ঠিক বিপরীত মেরুতে এখন শান্তর অবস্থান। তার মাঝে নেতৃত্বগুণ দেখতে পান বাংলাদেশ দলের ম্যানেজমেন্ট। এ জন্যই তো ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে লিটন কুমার দাস দলে থাকার পরও সাকিব আল হাসানের ডেপুটি হিসেবে শান্তকেই বেছে নেয় বিসিবি। খাতা-কলমেই শুধু সহঅধিনায়ক হিসেবে থাকেননি, বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়কত্বও করেছেন শান্ত। সাকিব ইনজুরিতে থাকায় ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন তিনি। ইনজুরির কারণে সাকিব খেলতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতেও। তাই অজিদের বিপক্ষে ম্যাচেও অধিনায়কত্ব সামলেছেন শান্ত।

একটা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শান্তকে নিয়ে কত ট্রলই না হতো! তাকে একাদশে রাখা নিয়েও সমালোচনা হয়েছে অনেক সমালোচনা, কটূক্তি শুনতে হতো ম্যানেজমেন্টেরও। সর্বশেষ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর একটি টিভি শো-তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, ‘একসময় শান্তকে দলে রাখার জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।’ আসলেই তাই। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে শান্তই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ট্রলের শিকার হয়েছে। ‘লর্ড’, ‘স্যার’ কত নামেই না তাকে ডাকা হয়েছে! তবে শান্ত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন তার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান, বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, সর্বশেষ এশিয়া কাপেও দাপুটে ব্যাটিং শান্তকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।

ভারতের মাটিতে সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপে অবশ্য নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি শান্ত। তবে বাংলাদেশের দুই জয়ে বড় অবদান তারই। দুটি ম্যাচেই করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ রান। আফগানিস্তানের ৫৯ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই বাঁহাতি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা কিংবা না খেলা অনেকটাই নির্ভর করছিল এই ম্যাচের ওপর। সেই লড়াইয়ে জয়ী হয় বাংলাদেশ। ৯০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে সেই জয়ে বড় অবদান রাখেন শান্তই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে খেলেও খারাপ করেননি, করেছিলেন ৫৭ বলে ৪৫ রান।

বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ সফরে এসেছে নিউজিল্যান্ড। সাকিব ও লিটনের অনুপস্থিতিতে শান্তর কাঁধেই পড়ে দলের নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব। সেই দায়িত্বটা কী দারুণভাবেই না পালন করলেন শান্ত। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বলতে যা বুঝায়, শান্ত সেটিই করলেন। প্রথম ইনিংসে ৩৫ বলে ৩৭ রানে ফিরলেও ইনিংসটা বড় না করতে পারার আক্ষেপ ছিল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে ফেলেন, খেলেন ১৯৮ বলে ১০৫ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। সিলেট টেস্ট জয়ের ভীত গড়ে দেয় অধিনায়কের এই ইনিংসটিই।

হুট করেই জাতীয় দলে ঢুকে যাননি শান্ত। বয়সভিত্তিক খেলায় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই তিনি জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। শান্তর একটি রেকর্ডের কথা হয়তো বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেট ভক্তদেরই অজানা। অনূর্ধ্ব-১৯ বা যুব ওয়ানডের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শান্ত (১৮২০)। সেই তালিকায় দুইয়ে রয়েছেন পাকিস্তানের সামি আসলাম (১৬৯৫)। দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক (১৪০৯) রয়েছেন চারে। অবাক হওয়ার বিষয় এই তালিকার ১৩ নম্বরে রয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার বাবর আজম। বিরাট কোহলির অবস্থান ৩৪ নম্বরে। জাতীয় দলে শুরুর দিনগুলো শান্তর সংগ্রামের হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আস্থায় পরিণত হয়েছেন। তিনি টেস্টে সর্বশেষ চার ইনিংসের তিনটিতেই হাঁকিয়েছেন শতক।

শান্তর ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাকে ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’ বলেও অবিহিত করেন। এই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মূর্তজাও। বিপিএল চলাকালে শান্ত সম্পর্কে মাশরাফি বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটে মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যেটা শান্তর ক্ষেত্রে আমি দেখেছি। সে বাইরের জিনিসগুলোতে এত কান দেয় না। সেক্ষেত্রে আমার বিশ্বাস হয়, এই ছেলেটা লম্বা রেসের ঘোড়া। আমি বিশ্বাস করি, এই ছেলেটা বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে।’ ম্যাশের মতো আমাদেরও বিশ্বাস, শান্ত বাংলাদেশকে অনেক কিছু দেবে, যাবে বহুদূর।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ